আন্তর্জাতিক

অসমের নাগরিকত্ব ইস্যুতে উত্তাল ভারতীয় সংসদ

Image result for ভারতীয় সংসদ

ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে (এনআরসি) ৪০ লাখ লোকের নাম নথিভুক্ত না হওয়ায় আজ ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা উত্তাল হয়ে ওঠায় অধিবেশন মুলতুবি করে দেয়া হয়েছে।

আজ (মঙ্গলবার) এনআরসি ইস্যুতে বিরোধীদলীয় সদস্যরা সরকারকে চেপে ধরার চেষ্টা করেন। সরকারপক্ষে বিজেপি সভাপতি ও রাজ্যসভার সদস্য অমিত শাহের মন্তব্যে পরিস্থিতি চরমে ওঠে।

অমিত শাহ বিরোধী কংগ্রেস সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘অসমে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পঞ্জি কার্যকর করার মতো সাহস তিনি দেখাতে পারেননি। কংগ্রেসের ক্ষমতা ছিল না ওই ব্যবস্থা কার্যকর করার। আমাদের হিম্মত আছে বলে আমরা তা করেছি।’

অমিত শাহ বলেন, ‘সকলেই ৪০ লাখ, ৪০ লাখের দোহাই দিচ্ছেন। আমি জানতে চাই এই ৪০ লাখের মধ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী কত? আপনারা কাদের বাঁচাতে চাচ্ছেন? আপনারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে চাচ্ছেন?’

আজ অমিত শাহের ভাষণ দেয়ার সময় বিরোধীরা নিজ নিজ আসন ছেড়ে চেয়ারম্যানের আসনের সামনে ওয়েলে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

চেয়ারম্যান এম বেঙ্কইয়া নাইডু বিরোধী সদস্যদের আসনে ফিরে যাওয়া এবং বারবার শান্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানালেও ক্ষুব্ধ সদস্যরা তাতে কান দেননি। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এ সংক্রান্ত বিবৃতি দিতে পারেননি।

অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় আজ দিনভর অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।

আজ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেসের সিনিয়র এমপি তার ভাষণে বলেন, ‘আমাদের কোনো নাগরিককে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বের করে দেয়া উচিত নয়। এটা মানবাধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়। এনআরসি’কে রাজনীতিকরণ ও ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা হিন্দু-মুসলিমের বিষয় নয়।’

সমাজবাদী পার্টির এমপি রামগোপাল যাদব বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের যেকোনো অংশে মানুষ বাস করতে পারে। কিন্তু এনআরসি তালিকায় বিহার ও উত্তর প্রদেশের হিন্দু-মুসলিম সকলের নাম কাটা হয়েছে, তারা এখন কোথায় যাবে?’

সিপিআইয়ের এমপি ডি রাজা বলেন, ‘ওই সিদ্ধান্তে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব পড়বে। সরকারকে এ ব্যাপারে সংসদ ও অন্য দলের মত নেয়া উচিত।’

আজ সংসদ চত্বরে তৃণমূল এমপিরা ওই ইস্যুতে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এনআরসি সমস্যা প্রসঙ্গে অসমের ‘এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস’ (এপিসিআর)-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া আজ (মঙ্গলবার) বলেন, ‘অসমে মিয়ানমারের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য যে পরিকল্পনা ছিল তা ভেস্তে গেছে। এটা এখানে সম্ভব নয় এবং ভেস্তে যাওয়ার কারণ হল, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে অসমের বিষয়টি আগে থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসায়। বিশেষকরে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই ‘রেডিও তেহরান’,  আলজাজিরা, সিএনএন, বিবিসি -এরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিষয়টি কভার করেছে। বিশ্বের সমস্ত সচেতন মানুষ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিলেন, যারফলে সরকার চাপে পড়ে এবং আমরা আজ এই ডেভেলপমেন্টে পৌঁছেছি। অন্যথায় ওই সংখ্যাটা ৩৫ বছর ধরে যেভাবে ৭০/৮০ লাখ দাবি করে নিয়ে আন্দোলন হল, সেই সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া হতো।’

আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া বলেন, ‘যাদেরকে অসমে ৭০/৮০ লাখ বাংলাদেশি আছে বলে উসকে দেয়া হয়েছিল, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এখানে আদৌ এ ধরণের কোনো বাংলাদেশি নেই। ১৯৭১ সালের পরে যে ৮/১০ লাখ মানুষ এসেছিলেন, যারা এখানে শরণার্থীর মর্যাদায় আছেন, সেইলোকগুলোই কেবল আছেন।’ অসমকে অশান্ত করে তোলার এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘বাঙ্গাল খেদাও’ নামে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একসময় লোকেদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠন, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টা ও জোরালো প্রতিবাদে ওই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’

Back to top button