স্বাস্থ্য

আয়োডিনের অভাব হলে আমাদের দেহে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে

শরীরের জন্য আয়োডিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও বিষয়টিকে আমরা কমই গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

থাইরয়েড হরমোন এবং হজমের কর্মকাণ্ডের জন্য এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আয়োডিনের অভাব হলে শারীরিক বৃদ্ধি বা গঠনে বড় ধরণের প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমাদের অনেকেরই জানা নেই, কতটা আয়োডিন আমাদের দরকার বা কোন খাবারে সেটি পাওয়া যাবে?

এ নিয়ে গবেষণার পর সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্গারেট রেম্যান দেখতে পেয়েছে যে, আধুনিক অনেক স্বাস্থ্যকর খাবারেই আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে। যা বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝূঁকি তৈরি করতে পারে।

আমাদের আয়োডিন কেন দরকার?

শরীরের বৃদ্ধি আর খাবার হজমে প্রধান ভূমিকা রাখে থাইরয়েড হরমোন আর সেই হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আয়োডিন।

”মানুষের বুদ্ধি বা শেখার ক্ষমতার অভাবের পেছনে আয়োডিনের অভাবই প্রধান কারণ, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব,” বলছে অধ্যাপক রেম্যান।
”যদি গর্ভবতী নারীরা যথেষ্ট পরিমাণ আয়োডিন না পায়, তাহলে তাদের সন্তান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অথবা হরমোন সমস্যা নিয়ে জন্ম হতে পারে।” রেম্যান বলছে, আল্পসের কাছাকাছি এলাকায় অনেকের মধ্যে আয়োডিনের সমস্যা প্রকট ভাবে আছে। সেখানে অনেকের গলায় থাইরয়েড গ্লান্ড ফুলে বড় হয়ে থাকতেও দেখা যায়।

অধ্যাপক রেম্যান বলছে, এখন আমরা জানি এটা আয়োডিনের অভাবের একটি দৃশ্যমান নমুনা। থাইরয়েড গ্লান্ড অতিরিক্ত ফুলে যায়, কারণ এটি রক্ত থেকে আয়োডিন নিয়ে জমা করে রাখার চেষ্টা করে।

‘স্বাস্থ্যকর খাবারের ঝুঁকি’

সারা বিশ্বেই খাবারের মধ্যে সম্ভবত আয়োডিনের সবচেয়ে উৎস সাদা মাছ এবং ডিম। বেশিরভাগ দেশে খাবারের লবণেও আয়োডিন যুক্ত থাকে। যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশে মানুষ দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকে সরাসরি আয়োডিন পেয়ে থাকে, কারণ গরুর খাবারে আয়োডিন যোগ করা হয়।

কিন্তু শিল্পোন্নত দেশেও অনেক মানুষের মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি দেখা যায়। খাবারে আয়োডিনের অভাব রয়েছে, সেটা এ কারণে নয়। এর প্রধান কারণ, তারা এসব খাবার খেতে চায় না।

এই দলে সবচেয়ে বেশি রয়েছে নিরামিষ আহারীরা, যাদের খাবারের তালিকায় গোসত থাকে না। দিনে দিনে এই দলের সংখ্যাও বাড়ছে।
যে গর্ভবতী নারীরা গোসত খায় না, তাদের ক্ষেত্রে আয়োডিন জনিত সমস্যা বেশি দেখা যায় নরওয়েজিয়ান ইন্সটিটিউট অফ পাবলিক হেলথ বিভিন্ন বয়সের মানুষজনের উপর সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে, যার মধ্যে গর্ভবতী নারীরাও রয়েছে।

সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে, নিরামিষ আহারীদের মধ্যে আয়োডিন গ্রহণের হার খুবই কম।

অধ্যাপক রেম্যানও দেখতে পেয়েছে, নিরামিষ আহারী আর যারা গোসত খায় না, এরকম গর্ভবতী নারীদের আয়োডিন সমস্যা তাদের শিশুদের মধ্যেও পড়ে।

 

নব্বুইয়ের দশকে ১৪ হাজারের বেশি গর্ভবতী নারীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল অধ্যাপক রেম্যান। এরপর অধ্যাপক রেম্যান তাদের ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও বেড়ে ওঠার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখে।

বিশেষ করে সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তার দিকটি তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরে রাখে। তাদের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে।

তারা দেখতে পেয়েছে, যে নারীদের আয়োডিনের সমস্যা ছিল, তাদের সন্তানরা আট বছর বয়সে মৌখিক বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছে। নয় বছর বয়সেও তাদের পড়াশুনায় কম সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

এই পরীক্ষা তারা দেখতে পেয়েছে, মায়ের সমস্যার প্রভাব পড়েছে তাদের সন্তানদের ওপর।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, যাদের সামান্য আয়োডিন ঘাটতি রয়েছে,এই সমস্যা তাদের মধ্যেও প্রবলভাবে রয়েছে।

কোথায় পাওয়া যায় আয়োডিন?

বিশ্বে আয়োডিনের সবচেয়ে বড় উৎস সমুদ্র।

সমুদ্র থেকে আকাশ, পরিবেশ, বৃষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে খাদ্য চক্রের মাধ্যম গাছপালা বা প্রাণীর গোসত খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে আসে।

কিন্তু ভূমি বেষ্টিত এলাকায় সব সময়ে সমুদ্র ছুঁয়ে আসা বৃষ্টি হয় না। আবার যারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল, তারাও সব খাবারে আয়োডিন পায় না। যা ঘটনা ঘটে আল্পসে, পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো বা ইটালি, রাশিয়া, মধ্য আফ্রিকার পাহাড়ি এলাকাগুলোয় দেখা যায়।

আবার বাংলাদেশের মতো বন্যা প্রবণ এলাকায়ও আয়োডিনের ঘাটতি দেখা যায়। কারণ বন্যার পানি মাটি থেকে আয়োডিন ধুয়ে নিয়ে যায়।

প্রতিদিন কতটা আয়োডিন দরকার?

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকে যে,একজন নারীর খাবারে প্রতিদিন ১৫০ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন থাকা উচিত।

কিন্তু একেকটি খাবারে আয়োডিনের মাত্রা একেক রকম। তাই কোন খাবার কতটুকু খেলে পরিমাণ মতো আয়োডিন পাওয়া যাবে বলা কঠিন।

তবে সাদা মাছে যতটা আয়োডিন থাকে, তৈলাক্ত মাছে ততটা থাকে না।

ঠাণ্ডা দুধে বেশি আয়োডিন থাকে।

অর্গানিক নয়, এমন দুধেও যথেষ্ট আয়োডিন থাকে। কারণ খামারের গরুকে কি খাওয়ানো হবে, এসব বিধিবিধানের কারণে এসব দুধ আয়োডিন সম্পন্ন হয়।

সবচেয়ে ভালো হলো, নানা ধরণের খাবার খাওয়া। গোসতের মতো কোন একটি খাবারের ধরণ একেবারে বাদ না দেয়া, যদি না চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকে।

Back to top button