আন্তর্জাতিক

দূষণ ও দিল্লির জোড়-বিজোড় গাড়ি তত্ত্ব

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এ বছরের পয়লা দিন থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে জোড় এবং বিজোড় নম্বরের উপর ভিত্তি করে প্রাইভেট কারের চলাচল। অর্থাৎ যে গাড়ির নম্বর জোড় সংখ্যায় তারা যেদিন রাস্তায় নামবে সেদিন কোনো বিজোড় সংখ্যার গাড়ি থাকবে না। তারা নামবে পরের দিন। পাল্টাপাল্টি দিনে এইভাবে গাড়ি চালানো আগামী ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

দিল্লি শহরের ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসন এবং মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণ কমানোর জন্য মূলত গত শুক্রবার থেকে এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। এর ফলে ১৪ দিন সময়ে দিল্লির রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে।

দিল্লির অধিবাসীদের জন্য বায়ুদূষণ একটা পুরাতন এবং মারাত্মক সমস্যা। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যখন অনেক মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষেরা তাদের বাসার জন্য কিনছেন বাতাস বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র এবং রাস্তাঘাটে অনেকেই মুখে মাস্ক পরে হাঁটছেন। শুধু তাই না, দিল্লি শহরের হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
গত বছর ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশান দিল্লিকে বিশ্বের ১ হাজার ৬শ’ শহরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর বলে উল্লেখ করেছে। সকালবেলায় প্রায় সময়ই শহর ঘিরে থাকে ধোঁয়াশা। যানবাহনের ধোঁয়া এবং উচ্ছিষ্ট ফসল পোড়ানোর ধোঁয়াসহ আরও অনেক ধরনের কিছুই এই বাতাস দূষণের জন্য দায়ী।

খুব সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা যায়, গত ২০১৪-১৫ সালে দিল্লির রাস্তা জুড়ে ছিল ৮৮ লাখ যানবাহন। জরিপের ফলাফল মতে, আগের বছরের তুলনায় দিল্লিতে ১৪ শতাংশ যানবাহন বৃদ্ধি পেয়েছে।

জোড় বিজোড় সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এইভাবে প্রাইভেট কার চালানোর ব্যাপারে ভারতের বিজ্ঞান এবং পরিবেশ কেন্দ্রের পরিচালক অনুমিতা রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছি। এর ফলে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে করে পাবলিক যানবাহনগুলো আরও ভালো করে চলাফেরা করতে পারছে। আগে প্রাইভেট গাড়ির কারণে সৃষ্ট যানজটে বাস, ট্যাক্সি কিংবা অটো শহরের ভিতরে তাদের নির্দিষ্ট রুটে পরিভ্রমণ না করতে পারায় সাধারণ মানুষ ঠিকমত জায়গাই পেত না।’

কিন্তু প্রাইভেট কার শহরের যানজটে ভূমিকা রাখলেও দূষণের জন্য কিন্তু সম্পূর্ণ দায়ী নয়। দূষণের জন্য আরও অনেক কারণ রয়েছে। তাহলে দূষণ কমাতে দিল্লি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা কি?

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও রয়েছে শহরের একটি অতি পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া। এছাড়া বড় আকারের ডিসেল ইঞ্জিন চালিত গাড়ি বিক্রির উপরেও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে। ভারী ট্রাকগুলো যাতে দিল্লিতে কম ঢোকে সেজন্য রাস্তার শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে।

দিল্লির সুপ্রিম কোর্ট দশ বছরের পুরনো ট্র্যাককে শহরে ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি ট্যাক্সি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বলা হয়েছে, এ বছরের মার্চ মাসের মধ্যে তাদের গাড়িগুলোকে প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) দিয়ে চালানোর জন্য পরিবর্তিত করতে। আইন বহির্ভূত গাড়ি পরীক্ষার জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের সাথে কয়েক হাজার সেচ্ছা সেবক কাজে নেমে পড়েছেন রাস্তায়।

এ পরিকল্পনা থেকে কার্যকরী ফলাফল পাওয়ার জন্য অন্তত কয়েকমাস সময় লাগবে। তবে প্রথম দিনের ফলাফলে দেখা যায় দিল্লির বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থ পিএম২.৫ এর মাত্রা ছিল ২৯৭। বছরের এই সময়ের জন্য এই সংখ্যা পূর্বের চেয়ে তুলনামূলক কম। যদিও এটা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশানের মতে বাতাসে পিএম২.৫ এর স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ২০।

তবে এই জোড় বিজোড় আইনের আওতা থেকে অনেকেই রেহাই পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে নারী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, পুলিশ, অসুস্থ মানুষ এবং মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীরা। নারীরা সবদিনই গাড়ি চালাতে পারবেন, কিন্তু সাথে কোনও পুরুষ মানুষ থাকতে পারবেন না। শুধু ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুরা ছাড়া।

সরকার থেকেও অতিরিক্ত ৩ হাজার প্রাইভেট বাস ভাড়া করা হয়েছে গণ পরিবহনে সহায়তা করার জন্য। দিল্লির পরিবহন মন্ত্রী গোপাল রায় বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, মানুষকে এটা বোঝানো যে দূষণের বিরুদ্ধে এই লড়াই আসলে তাদের ভালোর জন্যই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button