খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যা বললো দুদকের আইনজীবী

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে যে দু’টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেছে, তাদের জামিন আবেদনে যে দুইটি যুক্তি ছিল এর একটি হচ্ছে স্বল্প মেয়াদে সাজা, অপরটি তিনি অসুস্থ। এর বিরোধিতা করে আমি আদালতে বলেছি অসুস্থতার স্বপক্ষে আদালতে কোনো মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। স্বল্প মেয়াদের সাজায় জামিন দেয়ার কোনো নজির আপিল বিভাগের রায়ে নেই।

এর আগে শুনানিতে আদালত জানায় – নিম্ন আদালতের নথি আসার পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেবে হাইকোর্ট।

রোববার বিকেল সাড়ে ৩ টায় জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। এরপর দুই বিচারক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। পরে আদালত বলেছে, ‘নিম্ন আদালতের নথি আসার পর আদেশ দেয়া হবে।’

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দুপুর আড়াইটা থেকে শুনানি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন চাওয়া হয় আবেদনে।

শুনানিতে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। জামিন আবেদনের শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি আদালতকে বলে, ‘ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী যিনি এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করেছে।’

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেছে, ‘একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের স্বাক্ষরে কীভাবে টাকা চলে যায়? ওই সময় তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসায়ই থাকত। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এত বড় দায় এড়াতে পারে না।’

খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করে।

অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে।

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী অংশ নেয়।

এর আগে, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করতে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম। কিন্তু আইনজীবীদের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে বিচারকদ্বয় এজলাস কক্ষ ত্যাগ করে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীনকে লক্ষ্য করে বলে, ‘প্রেসিডেন্ট এমনটি হলে আমরা কীভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবো।’

জয়নুল আবেদীন জবাবে বলেছে, ‘মাননীয় আদালত, এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার প্রতি দেশবাসীর আগ্রহ আছে, আইনজীবীদেরও আগ্রহ আছে।’

এ সময় অপর বিচারপতি সহিদুল করিম বলেছে, ‘আপনাদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময় দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমরা উনাদের (জয়নুল আবেদীন) বলেছিলাম, তাদের পক্ষে ৩০ জন এবং আমাদের পক্ষে ৩০ আইনজীবী উপস্থিত থাকুক। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি…।’

আদালত এ সময় বলে, ‘আপনারা ঠিক করেন, আমরা ১০ মিনিট পর আবার বসবো।’

দুপুর আড়াইটায় বিচারকদ্বয় ফের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে শুনানি শুরু করে।

দুপুর দেড়টার দিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে অংশ নিতে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেবে বলে জানায়। এছাড়া খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত হয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলীসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।

২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। পাশাপাশি স্থগিত করে তার অর্থদণ্ড।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিল আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। খালেদার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল (আপিল নম্বর ১৬৭৬/২০১৮) করেন। আপিলের ফাইলিং আইনজীবী আবদুর রেজাক খান। ৪৪টি যুক্তি তুলে ধরে এ আপিল করা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

রায় ঘোষণার ১১দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পায়। অন্যদিকে, রোববার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ মামলায় তিনি রোববার পর্যন্ত জামিনে রয়েছে।

খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে গত বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী। কিন্তু আবেদনের বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেয়নি। আদালতের আদেশ না পাওয়ায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে পুলিশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেনি।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছে, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরের জন্য আবেদন করেছি। এখন তাকে হাজির করার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন বলেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুদক আবেদন করেছে। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছে, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরের জন্য বিচারকের অনুমতি লাগবে। তবে আদালত এখনও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি বলেই জানি।

এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে।