জাতীয়

 যানযটে স্থবির জনজীবনঃ সময় অপচয় সূচকে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়, অদক্ষতা সূচকে শীর্ষে !

বিভিন্ন দেশের রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ ২০৩টি শহরকে বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা প্রণয়ন করেছে নামবিও। যানজটের জন্য কোলকাতা শহরের স্কোর ৩০২ দশমিক ৯৪। আর ৩০০ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা।

বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামবিওর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০১৮তে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ সূচকের তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের কলকাতা আর দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। এর আগে ২০১৭ সালেও একই অবস্থানে ছিল ঢাকা। তবে ২০১৬ সালে তৃতীয় ও ২০১৫ সালে এ অবস্থান ছিল অষ্টম।

২৯৪ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর শারজাহ। আর চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারতের দুই শহর দিল্লি ও মুম্বাই। যানজটপূর্ণ শহর দুটির স্কোর যথাক্রমে ২৮১ দশমিক ৪৩ ও ২৭৫ দশমিক ২২। এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে কম যানজটপূর্ণ শহরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। শীর্ষ পাঁচে এরপর রয়েছে যথাক্রমে সুইডেনের গোথেনবার্গ, সুইজারল্যান্ডের বাসেল, রোমানিয়ার দুটি শহর ব্রাসোভ ও তিমিসোয়ারা।

এ সূচক প্রণয়নে কয়েকটি উপসূচক ব্যবহার করেছে নামবিও। এর মধ্যে রয়েছে- সময় সূচক, সময় অপচয় সূচক, অদক্ষতা সূচক ও কার্বন নিঃসরণ সূচক। এর মধ্যে সময় সূচক ও সময় অপচয় সূচকে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। তবে অদক্ষতা সূচকে ঢাকা শহর রয়েছে শীর্ষে আর কার্বন নিঃসরণ সূচকে ৩২তম অবস্থানে।

সময় সূচকের ক্ষেত্রে কোনো গন্তব্যে পৌঁছানোকে বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মস্থল বা স্কুলে যাতায়াত সময়কে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আর সময় অপচয় উপসূচকে অসন্তোষের বিষয়টি উঠে এসেছে। জনসংখ্যার আধিক্য ও ঘনবসতিও এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে। অদক্ষতার সূচক মূলত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা নির্দেশ করে। অর্থাৎ ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কী প্রভাব ফেলছে, তা বিবেচনা করা হয়েছে। আর যানজটে সময় অপচয়ের কারণে নিঃসরিত অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা নির্দেশ করে কার্বন নিঃসরণ সূচক।

এতে দেখা যায়, ঢাকা শহরে কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে গড়ে সময় লাগে ৬১ মিনিট, দুই বছর আগে যা ছিল ৫৮ মিনিট। ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। প্রায় ৩৩ শতাংশ সড়ক ব্যবহার করে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ি, যেগুলোয় গড়ে দেড়জন (এক দশমিক পাঁচ) করে যাতায়াত করে। আর ৩৯ শতাংশ সড়ক ব্যবহার করে বাস, যেগুলোয় গড়ে ৫০ জন করে যাতায়াত করে। এছাড়া ১১ শতাংশ মানুষ গন্তব্যে যাতায়াত করে হেঁটে। আর ১১ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে রিকশা ও ছয় শতাংশ বাইক।

২০১৯ সাল থেকে পরবর্তী ছয় বছরে বিশ্বের ১৩টি শহরে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে ব্যক্তিগত গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে- নরওয়ের অসলো, স্পেনের মাদ্রিদ, জার্মানির হামবুর্গ ও বার্লিন, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসসহ বেশকিছু আধুনিক শহর। এসব শহরে হাঁটা ও বাইসাইকেল চলাচলকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। অথচ এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এ শহরে প্রতিদিন গড়ে নামছে ২০০টি করে ব্যক্তিগত গাড়ি ও ছোট যান। এতে রাজধানীতে যানজট ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

যদিও এ শহরে পর্যাপ্ত সড়কের অভাব রয়েছে। কারণ একটি শহরের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। তবে ঢাকায় সড়ক রয়েছে সাত থেকে আট শতাংশ। তবে গাড়ি চলাচলের মতো পথ রয়েছে তিন থেকে চার শতাংশ সড়ক। আর অপর্যাপ্ত সড়কে অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেয়ার কুফল মিলছে এ শহরে।

সূত্রমতে, বিশ্বের বিভিন্ন শহরের নানা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে অনলাইনে তা প্রকাশ করে নামবিও। এর মধ্যে রয়েছে- জীবনযাপনের ব্যয়, অপরাধের হার, স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান ও যানজটের অবস্থা। প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত তথ্য ফোর্বস, বিজনেস ইনসাইডার, টাইম, দ্য ইকোনমিস্ট, বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, চায়না ডেইলি, দ্য টেলিগ্রাফসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্র ব্যবহার করে।

উল্লেখ্য যে ফ্লাইওভার কিংবা মেট্রোরেল কোন যানযটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে না । একমাত্র সমাধান হচ্চে শহর বিকেন্দ্রীকরন অর্থাৎ দেশের শহরবাসীদের নিজ জেলায় কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে শহরমূখী জনস্রোতকে আটকানো, সাথে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে দেয়া ।

Back to top button