ব্রিধান ৮১ দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ভগ্যোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

ব্রিধান ৮১ দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের ভগ্যোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ধানের এ জাতটির বীজ কৃষক পর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হলে ধান উৎপাদনে সহায়ক হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিউিট(ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুর এর প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ আবু বকর সিদ্দিক সরকার বলেছেন এসব কথা। তিনি গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ব্রিধান ৮১’র কর্তন ও মাঠদিবসে আয়োজিত এক কৃষক সমাবেশে সভাপতির সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন।

দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ায় রাজাবাসর হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের হলরুমে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যের আগে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল ওয়াজেদ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা ও বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি রংপুর’র কৃষিবিদ মোঃ শওকত আলী সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর এর উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ তৌফিক ইকবাল ও পার্বতীপুর উপজেলা বিএডিসি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ্ মোঃ রওশন কবির।

উদ্ভাবিত ধান ব্রি ৮১’র মাঠ প্রদর্শনী কৃষক মোঃ হাবিবুর রহমান ও আরেক কৃষক গোবিন্দ লাল চৌহান অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে শতাধিক কৃষক উপস্থিত থেকে ব্রিধান ৮১’র বীজতলা তৈরী, মাঠ তৈরী, চারা রোপন, পরিচর্যা সব বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এসময় তারা পরবর্তীতে উচ্চফলনশীল এ জাতটি আবাদের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ড. আবু বকর সিদ্দিক সরকার আরও বলেন, জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০১৭ সালে ব্রিধান ৮১’র অনুমোদন প্রদান করেছে। বোরো মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত এ ধান উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ (১০.৩%) এবং সুগন্ধি ব্যতীত প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ধানের সকল বৈশিষ্ট বিদ্যমান রয়েছে এতে। চালে অ্যামোইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৬ দশমিক ৫ ভাগ হওয়ায় ভাত হয় বেশ ঝরঝরে ও সুস্বাদু। ধানের আকৃতি হয় বাসমতি চালের ন্যায় লম্বা ও চিকন। একারনে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। ৮১ ধান গাছের উচ্চতা হয় ১০০ সে.মি. এবং গাছ বেশ শক্ত হওয়ায় ঝড় বৃষ্টিতে সহজে হেলে পড়েনা।

তিনি আরও বলেন, ব্রিধান ৮১’র রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রমন প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক কম। দেশীয় বাজারে ২৮ ও মিনিকেটের চালের বিকল্প হিসেবে সমাদৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ধানটির জীবনকাল ২৮ এর সমান ১৪০ থেকে ১৪৫দিন। হেক্টরে এরফলন ৬ থেকে সাড়ে ৬ মেঃটন। যা অন্যান্য জাতের চেয়ে কমপক্ষে ১টন বেশি।

প্রধান অতিথি আব্দুল ওয়াজেদ তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১সালে দেশে লোক সংখ্যা ছিলো সাড়ে ৭ কোটি। তখন খাদ্য ঘাটতি ছিলো ২০লাখ মেঃটন। বর্তমানে দেশের লোক সংখ্যা ১৬ কোটি। তারপরও খাদ্য ঘাটতি নেই। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের বিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণালব্ধ ৯১টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের কারণে।

আব্দুল ওয়াজেদ বর্তমান সরকারকে কৃষি বান্ধব বলে অভিহিত করেন। কৃষকদের সমস্ত তথ্য বর্তমানে সংরক্ষন করা হচ্ছে। তাদের সব সমস্যা শোনার ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য কৃষি কর্মকর্তারা সদা নিবেদিত ও প্রস্তুত থাকেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে বেলা ৩টায় রাজাবাসর এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমানের প্রদর্শনী মাঠের ধান কাটা হয়। এখানে কাটা ধান ওজন করে হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ৪৮ মেঃটন পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।