আন্তর্জাতিক

ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো মরক্কো

Image result for মরক্কো

পশ্চিম সাহারা এলাকার স্বাধীনতাপন্থি আন্দোলন পলিসাইরো ফ্রন্টকে সহযোগিতার অভিযোগ এনে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে মরক্কো। মঙ্গলবার মরক্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, তেহরানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে ফেরত পাঠানো হবে রাবাতে থাকা ইরানের দূতকে। ইরান ও লেবাননের বিদ্রোহী গ্রুপ হেজবুল্লাহ পলিসাইরো ফ্রন্টকে সমর্থন দেওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসির বৌরিতা। তবে এই অভিযোগের তাৎক্ষণিক কোনও জবাব দেয়নি ইরান। অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে হেজবুল্লাহ জানিয়েছে, আমেরিকার চাপে পড়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাবাত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। রাবাতের অভিযোগ, পলিসাইরো ফ্রন্টের যোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে তেহরান ও লেবাননের হেজবুল্লাহ গ্রুপ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসির বৌরিতা আল জাজিরাকে বলেছেন, রাবাতের কাছে প্রমাণ রয়েছে আলজেরীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ইরান সরকারের দায়ী ব্যক্তিরা হেজবুল্লাহর সহায়তায় পলিসাইরো ফ্রন্টকে অর্থনৈতিক ও অস্ত্র সরঞ্জাম দিচ্ছে।

তিনি জানান, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসব প্রমাণ সরবরাহ করেছেন। প্রমাণ হিসেবে তাকে বিদ্রোহী গ্রুপটিকে অস্ত্র সরবরাহের নথি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিকদের নাসির বৌরিতা জানান, এই মাসে আলজেরিয়ার ইরান দূতাবাসের সম্মতিতে হেজবুল্লাহ পলিসাইরো গ্রুপকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এসএএম-৯, এসএএম১১ ও স্ট্রেলা মিসাইল সরবরাহ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তেহরানে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বলেও জানান তিনি।

বৌরিতা বলেন, মঙ্গলবার সকালেই তিনি মরক্কোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে তেহরান থেকে ফিরেছেন। ইরানে থাকা রাবাতের দূত ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন আর রাবাতে থাকা ইরানের দূতকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মরক্কো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান। আল জাজিরা বলছে, অতীতে পলিসাইরো গ্রুপকে ইরানের সমর্থন দেওয়ার নজির রয়েছে। এক বিবৃতিতে হেজবুল্লাহ পলিসাইরো গ্রুপকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের চাপে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মরক্কো।

উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০০৯ সালে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল রাবাত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির এক উপদেষ্টা বাহরাইনের ওপর সার্বভৌমত্বের দাবি তুললে সে সময় মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সুন্নি রাজত্বটিতে ইরান শিয়া ইসলামের বিস্তার ঘটাতে চায়। ২০১৬ সালে আবারও সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে তেহরান ও রাবাত। দুই বছরের মধ্যে পশ্চিম সাহারা নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে আবার ছিন্ন হলো সেই সম্পর্ক।

সাহারা মরুভূমির একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা এর পশ্চিমাঞ্চল। ওয়েস্টার্ন সাহারা নামে পরিচিত অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ ১৯৭৫ সালে স্পেন ছেড়ে দেয়। এরপরই ওই এলাকার দাবি করতে থাকে মৌরিতানিয়া, মরক্কো এবং পলিসাইরো গ্রুপ। পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে আলজেরিয়ার সমর্থনপুষ্ট পলিসাইরো ফ্রন্ট।

১৯৮৪ সালে মৌরিতানিয়া ওই অঞ্চলে তাদের দাবি তুলে নিয়ে পলিসাইরো ফ্রন্টের প্রস্তাবিত রাষ্ট্র সাহারাই আরব ডেমোক্রেটিক রিপাবলিককে সমর্থন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। সাহারাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাটিতে শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘ কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধান শহর ছাড়াও ওই এলাকার ৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মরক্কো। নিজেদের অখণ্ড অংশ দাবি করে মরক্কো এলাকাটি আলোচনার টেবিলে আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত বলে স্বীকৃতি দেয়। পালিসাইরো নিজেদের নির্ধারিত পুনর্গঠনের দাবিতে অটল রয়েছে।

Back to top button