পানি ও জঙ্গলের কাব্যে কাটুক একটি নান্দনিক বিকেল

শহরের কর্মব্যস্ত মানুষ প্রতিদিন ব্যস্ত থাকার পর সপ্তাহে একদিন সকল ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘোরার জায়গা খুঁজতে থাকে। নাগরিক কোলাহল, যানজটময় শহরের বুকে পাওয়া যায় না খালি পায়ে হাঁটার মতো সবুজ ঘাসের মেঠো পথ। পাওয়া যায় না বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো উপযুক্ত স্থান। কিন্তু ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে রয়েছে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন স্থান, যেখানে গেলে গ্রামের সবুজ ছোঁয়া পাওয়া যায়। দূর করা যায় চোখ ও মনের ক্লান্তি।

ঢাকা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজীপুরে রয়েছে গ্রামীণ আবেশের পরশ মাখা দৃষ্টিনন্দন স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। গাজীপুরে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক রিসোর্ট। প্রতিটি রিসোর্টই বেশ চমৎকার। তবে গাজীপুরের নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট এবং জল ও জঙ্গলের কাব্য খ্যাত পাইলট রিসোর্ট বেশ দৃষ্টিনন্দন। একটি চমৎকার দিন অথবা একটি চমৎকার বিকেল কাটাতে পারেন ঢাকার কাছেই গাজীপুরের নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট অথবা পাইলট রিসোর্টে। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় ২৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট। শিল্পী দম্পতি তৌকির আহমেদ ও তার স্ত্রী বিপাশা হায়াতের যৌথ উদ্যোগে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট একটি ভালবাসার নাম। নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট বেশ জনপ্রিয়। প্রকৃতির পরশ ও দৃষ্টিনন্দন স্থান দেখা যায় বলে ছুটির দিনগুলোতে অনেক ভিড় হয় এই রিসোর্টে।

যা যা দেখবেন

২৫ বিঘা জায়গা জুড়ে অবস্থিত নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে উপভোগ করতে পারবেন নানা কিছু। দিঘী, কৃত্রিম ঝর্ণা, কনফারেন্স রুম, সুইমিংপুল, কটেজ, খাবারের হোটেল ইত্যাদি। কটেজগুলো বেশ সুন্দর ও শিল্প সমৃদ্ধ। কারণ পুকুরের পানির উপর বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে ১১টি কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। কটেজগুলো নির্মাণে গজারী কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি কটেজ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

সুইমিংপুলে আনন্দঘন সময় কাটাতে পারবেন। প্রত্যেক পরিবারের তিনজন সদস্যকে ফ্রি সুইমিংপুল ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়। তিনজনের বেশী হলে ফি দিয়ে সুইমিংপুলে নামতে হয়।

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে আরো দেখতে পাবেন শুটিং স্পট, বাচ্চাদের খেলার স্থান, মুভি থিয়েটার, নৌকা, পুকুর, মাছ ধরার ব্যবস্থা। বইপ্রেমীদের জন্য রয়েছে লাইব্রেরী। বলা যায়, অবকাশ যাপনের জন্য উপযুক্ত সব স্থান পাবেন এই রিসোর্টে।

যা যা উপভোগ করবেন

চমৎকার, রুচিশীল কটেজ, পুকুর, লেক, লাইব্রেরী ছাড়াও আপনি উপভোগ করতে পারবেন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, ব্যাঙের ডাক। সন্ধ্যায় জোনাকিদের জ্বল জ্বল করা আলোয় বিমোহিত হয় পুরো রিসোর্ট। পূর্ণিমা রাতে মন মাতানো পূর্ণিমা উপভোগ করতে পারবেন। বাদল দিনে কটেজ থেকে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবেন। প্রায় সন্ধ্যায় উপভোগ করতে পারবেন বাউল গানের আসর। তাছাড়া পেইন্টিং প্রদর্শনীও হয় মাঝে মাঝে।

প্রবেশমুল্য

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে প্রবেশমূল্য ৫০০ টাকা।

ভাড়া

১ দিনের জন্য পানির উপরের কটেজের ভাড়া ১০,৭৫২ টাকা। ফ্যামিলি বাংলোয় থাকা যাবে ২৭,৮৩০ টাকায়, হোটেল কমপ্লেক্সে থাকা যাবে ৬,৩২৫-৮,২২২ টাকায়।

যেভাবে যাবেন

নিজস্ব পরিবহনে করে সহজে যাওয়া যায়। বাসে গেলে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-কাপাসিয়া মহাসড়কের রাজবাড়ী বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বাঙালপাড়া গ্রামে এই রিসোর্টটি অবস্থিত। রিকশা বা অন্য যেকোনো যান দিয়ে যেতে পারবেন।

পাইলট বাড়ি খ্যাত পানি ও জঙ্গলের কাব্য

পানি ও জঙ্গলের কাব্য নামটি শুনলেই মনে হয় গাছগাছালি ঘেরা সবুজ ও বিলের জলের কাব্যঘেরা জায়গা এটি। নামের মাঝে প্রকাশ পায় গ্রামীণ শীতল পরশ। রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার টংগীর পুবাইলে ৯০ বিঘা জায়গা জুড়ে জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছে।

কেউ কেউ একে পাইলট বাড়িও বলে। জানা যায়, সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত এক বৈমানিক নিজের অভিরুচি অনুযায়ী প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এই রিসোর্টটি নির্মাণ করেছেন ২০০৫ সালে। এখানে নিভৃতে প্রকৃতি উপভোগ করা যায়, পাখির কলকাকলি শোনা যায়।

প্রকৃতির সাথে শতভাগ মিল রেখে বাঁশ, কাঠ, পাটখড়ি ও ছন দিয়ে নির্মিত ছোট ছোট ঘর দেখলে মনে হয় পুরোপুরি গ্রামীণ পরিবেশ, যা এই রিসোর্টকে অনন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। এখানে কৃত্রিমতা নেই। যারা গ্রাম ভালবাসেন, সবুজ ভালবাসেন, পাখির কলকাকলি ভালবাসেন, বিল ভালবাসেন তাদের জন্য জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট উত্তম।

এখানে প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে দেখা যায়। সুইমিং পুল নেই, আছে বড় বড় পুকুর। সেই পুকুরে চাইলেই ঝাঁপ দিতে পারবেন মহা আনন্দে। এখানে নিজস্ব জমির উৎপাদন করা ফসল দিয়ে খাবার রান্না করা হয়। বড় বড় গাছ রয়েছে। ঘোরাঘুরির এক ফাঁকে বড় গাছের নিচে জিরিয়ে নিতে পারেন। মাথার উপরে দুপুরের তপ্ত রোদ থাকলেও গাছগুলো ছায়া দিয়ে যায় সারাক্ষণ। বিকেলে নৌকায় চড়ে বিলে ঘুরতে পারবেন। শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

খাওয়ার ব্যবস্থা

এখানে খাবার প্রস্তুত করার জন্য অনেক লোক নিয়োগ করা আছে। সকাল, দুপুর ও রাতে নিজস্ব জমি থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে সব তরকারী রান্না করা হয়। সকালের নাস্তার জন্য বিভিন্ন ধরনের পিঠা, রুটি, চালের রুটি, চা, সবজি, গোশত পাওয়া যায়। দুপুরের খাবার খাওয়া যায় ২২-২৫ রকম খাবারের আইটেম দিয়ে।

বাঁশ আর ছন দিয়ে তৈরি খাবার ঘরে বসে খেতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করবে। বিকেলের নাস্তায় খেতে পারবেন হরেক রকম পিঠা, হালকা নাস্তা ও চা। এখানকার রাঁধুনিরা আপ্যায়ন করে খুব। যত্ন সহকারে রান্না করে এবং যত্ন সহকারে খাবার পরিবেশন করে।

খরচ

সারাদিন জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে ঘোরা এবং সকাল, দুপুর ও বিকেলের হালকা নাস্তার জন্য জনপ্রতি খরচ হবে ১,৫০০ টাকা। সারাদিন ও রাতের খাবারের জন্য জনপ্রতি খরচ হবে ২,০০০ টাকা। তবে ৫ থেকে ১০ বছরের শিশু, কাজের লোক ও ড্রাইভারের জন্য খরচ হবে প্রতিজনের ৬০০ করে।

যাওয়ার উপায়

পুবাইল কলেজ গেট থেকে জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে নরসিংদীগামী বা কালীগঞ্জগামী যেকোনো বাসে চড়ে পুবাইল কলেজ গেট যেতে পারবেন। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে যেতে পারবেন রিসোর্টে। এছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহণ থাকলে সহজে যেতে পারবেন।