দেশের সংবাদ

বিক্ষোভে পুলিশের আক্রমনাত্বক মনোভাব

Image result for জলকামান

বাংলাদেশে বাস চাপা পড়ে দুই কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভের প্রতি পুলিশী ব্যবস্থায় কয়েক জায়গায় আইনভঙ্গ হচ্ছে বলে মনে করছেন শিশু অধিকার আন্দোলনকারীরা।

পুলিশ প্রশাসন এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের ‘পূর্ণ বয়স্ক মানুষ ও অপরাধী’ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের প্রতি কঠোর আচরণ করছে বলে তারা বলছেন।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের শিশু অধিকার ইউনিটের টিম লিডার মো. মকসুদ মালেক বলছিলেন, বাংলাদেশে শিশু অধিকার আইন রয়েছে। সেই আইনের ধারায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কিন্তু পুলিশ শুরু থেকেই এদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পুলিশ আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি বলেন।

গত রোববার ঢাকায় একই কোম্পানির দুটি বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতার সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দেয় এক চালক।

ঐ ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম নিহত হয়। এতে আহত হয় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী।

খবর পেয়ে ঐ কলেজের শিক্ষার্থীরা বাইরে বেরিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

এই বিক্ষোভের মুখে সোমবার বিকেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর পানি-কামান ব্যবহার করে এবং সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করে সড়ক অবরোধকারীদের ধাওয়া করে।

এছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে ছাত্রদের ধস্তাধস্তির দৃশ্য দেখা যায়। এক ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা যায় এক ছাত্রের কলার ধরে আছে।

তবে বিবিসির একজন সংবাদদাতা, যিনি শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন, তিনি বলেছেন, সোমবারের পুলিশকে বেশ মারমুখী দেখা গেলেও মঙ্গলবার ও বুধবার তাদের সংযত দেখা গেছে।

“এসব ঘটনায় কিশোর-কিশোরীদের মনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সেটি বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে, বলছেন আইন ও শালিস কেন্দ্রের মো. মাকসুদ মালেক, “এরা কোনভাবেই অপরাধ করেনি, সেকারণে তাদের প্রতি সাধারণ আইনের ধারাগুলো প্রয়োগ করা উচিত হবে না।”

এদের বিচার করার প্রয়োজন হলেও সেটা প্রচলিত আদালতে করা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“একটা কথা মনে রাখতে হবে এদের দুজন সহপাঠী বাসে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। ফুটপাথে দাড়িয়ে তারা যদি নিরাপদ বোধ না করেন, সেই কথাটি কী তারা বলতে পারবে না?”

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী আদেশ দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ বিভাগের কোন মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এই প্রশ্নটি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারাও নিশ্চয়ই ভাবছেন বলে মন্তব্য করেন পুলিশের সাবেক আইজি মো. নুরুল হুদা।

বিবিসির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, রাস্তায় আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকেন যেসব কর্মকর্তা তাকে একদিকে এসব বাচ্চাদের সাথে কী আচরণ করতে হবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হয়।

অন্যদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য তার ওপর যে আদেশ সেটাও তাকে পালন করতে হয়।

“৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে ওসব ভারী ভারী পোশাক পরে দায়িত্ব পালনের সময় অনেকেই মাথা ঠাণ্ডা রাখাতে পারেন না।”

ওদিকে বাস চাপার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি বুধবার তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই মামলায় আদালত মূল অভিযুক্ত ড্রাইভার মাসুম বিল্লাহকে সাতদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

বাসের কর্মচারী অন্য চার ব্যক্তি এখন আটক রয়েছে।

পাশাপাশি, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই বাসের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ বাতিল করেছে।

Back to top button