‘ভেগান’ বা ‘নিরামিষাশী’দের সম্পর্কে পাঁচটি তথ্য

‘প্রাণীরা কোন উপাদান নয়’ এমন ফ্রান্সে সম্প্রতি এমন শ্লোগান ব্যবহার করছেন নিরামিষ ভোগীরা
ভেগান বা নিরামিষাশীদের খাদ্য তালিকায় কোনো প্রকার প্রাণীর কোনো গোশত থাকে না।
এদের খাদ্য তালিকায় শুধু যে গোশত থাকে না এমন নয়। পোল্ট্রি, মাছ, দুগ্ধজাতীয় খাবার, ডিম ও মধু— এসবের কোনো কিছুই খান না একজন ভেগান।
অর্থাৎ ভেগানরা ভেজিটেরিয়ানদের মধ্যেও আরো অনেক বেশি কট্টর।
এমনকি পশুর চামড়া, ওল বোনা ও মুক্তার ব্যবহারকেও সমালোচনার চোখে দেখেন ভেগানরা।
ভেগানরা মূলত শাক-সবজি ও ফল-মূল জাতীয় খাদ্যই রাখেন তাদের খাদ্য তালিকায়।
১লা নভেম্বর ছিল বিশ্ব ভেগান দিবস। এই দিবসকে ঘিরে আসুন জেনে নেয়া যাক ভেগান আন্দোলনের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
১. ভেগানিজমের ইতিহাস:
পিথাগোরাসের পরিচিত একজন দার্শনিক এবং গণিতবিদ হিসাবে, কিন্তু তিনি একজন ছিলেন ভেগান বা নিরামিষাশী
১৯৪৪ সালে যুক্তরাজ্যের ডাল্টন ওয়াটসন প্রতিষ্ঠা করেন ভেগান সোসাইটি। মি. ওয়াটসনই ‘ভেগান’ শব্দটির প্রচলন ঘটান।
তাই, ভেগান শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় এমন একজন ভেজিটেরিয়ান যে, এমনকি দুধ ও ডিম জাতীয় খাদ্যও গ্রহণ করে না।
খাদ্য তালিকায় গোশত না থাকাটা নতুন কিছু নয়। আজ থেকে আড়াই হাজারের বেশি (২৫০০) সময় আগে প্রাচীন ভারতে এই চর্চা ছিল। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাতেও এমন প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।
২. স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব:
অনেক মানুষ নিরামিষ আহারী হয়ে উঠেছে এই আশায় যে এটি তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে
যুক্তরাজ্যে এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪৯ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য তালিকায় মাংস না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
কারণ গরুর গোশত ও প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত কৌটার মাংস খেলে অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বলে সাম্প্রতিক অনেক গবেষণাতেই তথ্য উঠে এসেছে।
কিন্তু নিরামিষাশী হয়ে গেলে কি সত্যি-সত্যি আপনার স্বাস্থ্যের কোনো উপকার হবে?
সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণা জানায় যে, হ্যাঁ, ভেগান হলে স্বাস্থ্যের কিছু উপকার সত্যিই হয় বটে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ভেগান হলেই কেউ দীর্ঘ জীবন পাবে।
৩. পরিবেশগতভাবে নিরাপদ
পৃথিবীতে নিরামিষ ভোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মাংস ভোগ করার পরিমাণও
কিন্তু অদ্ভুত রকমভাবে লক্ষ্য করা গেছে যে, পৃথিবীতে ভেগানিজমের দিকে যেমন আগ্রহ বাড়ছে তেমনি আবার গোশত ভোগ করার পরিমাণও বেড়েছে।
চীন ও ভারতের মতন দেশ, যাদের অনেক জনসংখ্যা আছে এবং যারা দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে তাদের মধ্যে দেখা গেছে যে, মাংস ভোগের প্রবণতা ক্রমশই বেড়েছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যা এবং ধরিত্রীর প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে ভীষণ চাপ বাড়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ সংকট দেখা দিতে পারে।
তবে, যদি টেকসই উপায়ে আরো ৭০ ভাগ বেশি খাদ্য উৎপাদন করত পারে তবে, এই সংকট এড়ানো সম্ভব।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, গোশতের যোগান বাড়াতে খামারে যে ব্যাপক সংখ্যক গবাদি-পশু পালন হয় এতে করে প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। আর এই গ্যাস জলবায়ুর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। কিন্তু ২০৫০ সাল নাগাদ তা বেড়ে হবে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি।
এই জনবহুল পৃথিবীতে গোশত বাদ দিয়ে নিরামিষাশী হওয়াকে দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস বলে ব্যাখ্যা করছেন ভেগানরা।
৪. বাড়ছে রমরমা ব্যবসা:
বড় প্রচারণা, বিখ্যাত মানুষদের উদাহরণ দেখে বা সামাজিক মাধ্যমে সুন্দর দেখানো- এসব নানা কারণে নিরামিষ আহারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে
গ্লোবাল ডাটা রিপোর্ট বলছে, সারা দুনিয়া জুড়েই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে ভেগানিজম বা নিরামিষাশীদের সংখ্যা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই গত তিন বছরে ভেগানিজমের বিস্তার হয়েছে ৬০০% এর বেশি।
আর ভেগান সোসাইটির তথ্য মতে, গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে ভেগানিজমের বিস্তার বেড়েছে ৪০০%।
বৈশ্বিক ভাবেও গোশত-বিহীন খাবারের চাহিদা ২০১৭ সাল নাগাদ এক হাজার গুণ (১০০০%) বেড়েছে বেড়েছে।
আর ২০১৮ সাল নাগাদ ভেগানিজমকে বিবেচনা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফুড ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা।
৫. কট্টর ভেগানিজমের ক্ষতিকর দিক
ফিলিপাইনের ম্যানিলায় প্রাণী অধিকার কর্মীদের সমাবেশ
ভেগানিজমের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাণী জগতের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু সম্প্রতি ভেগানিজম নিয়েও কিছু বিতর্ক আর সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
ইদানীং অনেকস্থানে পশু-প্রেমী ও পশু-অধিকার রক্ষাকারী কর্মীদের দ্বারা পশু-পালনকারী খামারী বা কৃষক এবং কসাইদের দোকানগুলো হামলা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে।
এছাড়া খুব বাজে আর আক্রমণাত্মক ভাষায় সমালোচনারও শিকার হচ্ছেন নিরীহ খামারী, কৃষক ও কসাইয়েরা।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা