জাতীয়

নির্বাচনের পরেই দলে ফিরবে বিএনপির বহিষ্কৃতরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দলটির পক্ষ থেকে একদিকে যেমন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করা, অন্যদিকে যেসব জায়গায় বিএনপি সুসংগঠিত রয়েছে সেখানে যাতে ধস না নামে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে।

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির সব পর্যায়েই পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ছিল। এমনই প্রেক্ষাপটে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা দেন ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে’। সেই মোতাবেক এখন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে শতাধিক পদধারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা সবাই দেখেছে তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়া অর্থহীন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করি না। তাছাড়া বিএনপির মত একটা জনপ্রিয় দল যদি এই নির্বাচনের বাইরে থাকে তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যেমনটা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে।

তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় কিছু ব্যাপার থাকে যেখানে আমাদের সামর্থ্য আছে সেখানে তো আর খালি মাঠে গোল দিতে দেয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে তারা দলীয় পরিচয়ের বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে। ফলে বিএনপির সুসংগঠিত এলাকাগুলো যেমন ঠিক থাকবে, আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কেমন আচরণ করে সেটাও সবার সামনে ফুটে উঠবে। নির্বাচন শেষ হলে বহিষ্কৃতরা নিশ্চয়ই ঘরে ফিরবে।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বলেন, ‘দল বলেছে, পদ-পদবী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে না। সেটা তো আমরা মেনেই নিয়েছি। দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমি অব্যাহতি নিয়েছি। দল এখন সবার জন্য যে প্রক্রিয়া করছে আমিও সেই প্রক্রিয়ায় পড়ে গেছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অতীত কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে আমার মত কর্মীর ভবিষ্যতে দলে আবারও জায়গা হবে। কারণ আমি তো হৃদয় থেকে এটা মুছে ফেলতে পারিনি। আমার হৃদয়ের মধ্যেই সব আছে। জীবদ্দশায় আমি বিএনপিই করব এবং দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীর পাশে থাকার চেষ্টা করব। তাতে দলে আমার পদ থাকুক বা নাই থাকুক। এটা আমার ভেতরের নিয়ত।’

রুবেল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এখনও দেখছি না আমি। আমার এখানে প্রচণ্ডভাবে হ্যামারিং হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন এসে আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, হুমকি-ধামকির মধ্যে রেখেছে। ৩০ ডিসেম্বর আমরা যেটা দেখেছিলাম, সেই দৃশ্যগুলো এখনও আমরা দেখছি। তারা বিভিন্নভাবেই ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করছে। ভোটারদেরকে বলে যাচ্ছে ভোট দিতে যেতে হবে না। ১৮ তারিখের ভোট ১৬ তারিখে হয়ে যাবে। এরকম পরিবেশ আমরা দেখছি। তাই অন্তত সরকারের চরিত্র উন্মোচন করার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। যেটা আমি সামনে উপস্থাপন করতে পারব যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও তারা মেনে নিতে চায় না। বিএনপি তো দূরে থাকল, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও তারা নির্বাচিত হতে দিতে চায় না। এই প্রতিবাদ করব এবং তা জোরেই করতে থাকব, সব সময় করতে থাকব’।

তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সরকার যে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটালে তার প্রতিবাদ করব। আমি মনে করি এটাও আমার দলীয় দায়িত্বের মধ্যে পড়বে যে আমি অন্তত সরকারের চরিত্র উন্মোমোচন করতে পারলাম এখান থেকে।’

নির্বাচনে অংশ না নেয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন? -এমন প্রশ্নে রুবেল বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত করব না। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সম্মান জানাই। এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু এলাকার রাজনীতির স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলা আমি মনে করি সবচেয়ে সুসংগঠিত ইউনিট ছিল। যেখানে সদর উপজেলা, থানা পর্যায়ে কোনো গ্রুপিং ছিলো না, পাশাপাশি কোনো ইউনিয়ন পর্যায়েও গ্রুপিং রাখি নাই। এভাবেই আমি সাজিয়েছিলাম ইউনিট। সংগঠিত ইউনিটে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি আমাদের এখানে জনপ্রতিনিধি অন্য কোনো দল থেকে আসে, বিশেষ করে সরকাারি দল থেকে আসে এখানে তারা আমাদের রাজনীতি করতে দেবে না। অতএব এখানে তৃণমূল নেতাকর্মী ও জনগণের দাবি ছিল তাদের মনের বাসনা পূরণের জন্য আমি প্রার্থী হয়েছি।’

রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত নুর নাহার বেগম বলেন, ‘দল দলের সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু এটা স্থানীয় নির্বাচন আমি দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম, এখনও আছি, সে কারণে আমার জনপ্রিয়তা আছে বলে মনে করি এবং জনগণের জন্য কাজ করব বলেই আমি প্রার্থী হলাম। দল দলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আমার যদি ভুল হয়ে থাকে সেটা দলের ব্যাপার।’

তিনি বলেন, ‘আমি দলীয় আদর্শ থেকে সরে এসে নিজে কোনো বেনিফিট পাওয়ার জন্য কিছু করি নাই। আামি দল চেঞ্জ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রার্থী হইনি। সেক্ষেত্রে দল যদি দল প্রয়োজন মনে করে তাহলে আমাদেরকে ডাকবে।’

নুর নাহার বেগম বলেন, ‘নির্বাচনে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। যার কারণে দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নেব। তবে আমি সেরকম মনে করি না। দলের ভুলগুলিকে ভুল এবং সঠিকগুলোকে আমাকে সঠিক বলতে হবে। এজন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেটা নিয়ে নিয়ে আমি সন্দিহান। আশা করি প্রশ্নবিদ্ধ একটা জাতীয় নির্বাচনের পরে সরকার স্থানীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না এটাই আমি আশা করে প্রার্থী হয়েছি।

পাবনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত জহিরুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম, দলের সঙ্গেই আছি। বহিষ্কার করলেও আমি দলের সঙ্গেই আছি। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

বহিষ্কৃতদের দলে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বলেন, ‘সকলের উচিত ছিল দলীয় সিদ্ধান্ত মানা। কিন্তু ভুলে হোক, আর আবেগে হোক তারা যে কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ জন্য দল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা অন্যায় কিছু না। তবে এখনও তারা যদি ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে নিশ্চয়ই দল সেটা বিবেচনা করবে।

Back to top button