অর্থ-বাণিজ্য

রফতানির সম্ভাবনাময় খাত মধু : কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:মৌচাষের বিষয়টি স্বল্পশ্রম ও স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগের তুলনায় অধিক মুনাফা লাভের সম্ভাবনাময় পেশা ও ব্যবসা হিসেবে জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে আমাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ অংশটুকু নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও মৌ চাষ ও বিপণনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয় রয়েছে। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট ৩০ শতাংশ নারী জড়িত

মৌ চাষ সম্প্রসারণ পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফসলের মাঠে মৌ চাষ কৃষকের জন্য বাড়তি আয়ের সংস্থান করে। মূল্যবান মৌ সম্পদ এবং মধু উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। মধু উৎপাদন, বিপণন, প্রসেসিং নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

রবিবার (১০ মার্চ) কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক রাজধানীর খামারবাড়ীর আ.কা.মু গিয়াস উদ্দিন মিলকি অডিটরিয়াম চত্বরে জাতীয় মৌমেলা ২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিন দিনব্যাপী মৌমেলার এবারের প্রতিপাদ্য-‘ফলন, আয় ও পুষ্টি বাড়াতে মৌ চাষ করি’। এবারের মেলায় মোট ৬০ টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে। এ মেলা আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই কৃষিসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সুউচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন । কৃষিকে প্রকৃত বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করতে হবে, এর জন্য বাজারজাত বিপণন ও রফতানি অপরিহার্য। জাপান আমাদের দেশ থেকে মধু রফতানি করে, তাহলে সে দেশে আরও অনেক কিছু রফতানি করা যাবে সেগুলো বের করতে হবে। আমাদের প্রক্রিয়াজাত ও দেশীয় ব্রান্ড না থাকায় কাঁচা মধুও রফতানি করতে হচ্ছে । মৌমাছি প্রকৃতির বন্ধু। পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মৌমাছির বিভিন্ন প্রজাতি আজ বিপন্নপ্রায়। তাই প্রকৃতির সুরক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। আমরা চাই ভিশন ২০৪১ অর্জন করে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান করে নিতে। উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কোনও খাতকেই পাশ কাটানোর সুযোগ নেই , সব সেক্টরকেই গুরুত্ব দিয়ে এর উন্নয়ন করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র জাতিকে একতাবদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা তার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আবার একাত্ম হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, মধু এখন রফতানি পণ্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ফসলের মাঠে মৌমাছি বিচরণ করলে সেখানে বাড়তি পরাগায়নের কারণে ফসলের উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। মৌচাষের মাধ্যমে মধু আহরণে সমৃদ্ধি ও শষ্য বা মধুভিত্তিক কৃষিজ উৎপাদন বাড়ে। মৌসুমে সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালিজিরা, লিচুসহ আবাদ হয় মোট প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে বা বাগানে। এর মাত্র ১০ শতাংশ জায়গায় মৌ বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ হাজার মৌ-চাষিসহ মধু শিল্পে জড়িত প্রায় ২ লাখ মানুষ। দেশে মধুর বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬ হাজার টন। ফসলের এই পুরো সেক্টরটিকে মধু আহরণের আওতায় আনতে পারলে ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হবে। দেশে এখন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়। পুরো সরিষার মাঠ মধু সংগ্রহের আওতায় আনা গেলে উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জনাব মীর নুরুল আলম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর মো. আহসানুল হক স্বপন ।

Back to top button