অর্থ-বাণিজ্যজাতীয়

পায়রা বন্দরে ভিড়ল চীনা জাহাজ

full_2061355581_1442289391

দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। পাথরবাহী চীনা জাহাজ বহির্নোঙরের মধ্য দিয়ে এ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে গতকাল সোমবার রামনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। পাথরগুলো আমদানি করা হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের জন্য। এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে লাইটারেজ অপারেশনাল কার্যক্রম। এ বন্দরটি চালুর মধ্য দিয়ে নিরাপদ বাল্কপণ্যাদি নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে। তবে স্বল্প পরিসরে এ গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোপুরি চালু হবে ২০১৮ সালে।
সূত্র জানায়, পায়রা বন্দরকে ঘিরে প্রকল্প এলাকায় টারমিনাল স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম চালু, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রশাসনিক ভবননির্মাণ, নিরাপাদ পানির সরবরাহে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট স্থাপনসহ প্রযোজনীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার উন্নয়ন কার্যক্রমকে ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চল আলোকিত হয়ে উঠেছে। এক সময় সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জনপদ ছিল অবহেলিত। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা এ অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতো বিভিন্ন শহরে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সরকার রাবনাবাদ নদীর অববাহিকা ও বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরটির কার্যক্রম শুরু করে। এরপরই বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়নে পাল্টে যেতে শুরু করে এ উপজেলার চিত্র। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক বিনিযোগকারীরা এর আশেপাশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি কেনা শুরু করেছে।
এদিকে পায়রা বন্দর এলাকায় বন্দর, জেটি, কন্টেইনার টারমিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টারমিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি চলমান ‘পায়রা কাস্টমস হাউসে’র জমি দ্রুত অধিগ্রহণের বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদার ভ্যাসেল বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজে এ বন্দরে পণ্য আসা-যাওয়া করবে। সমুদ্রবন্দরের পাশে প্রায় ৫০০ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক নৌঘাঁটি। এ নৌঘাঁটিতে নৌ-কমান্ডো, অ্যাভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বার্থিং সুবিধা থাকবে। অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পন্ন হলে এখানে গড়ে উঠবে বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নির্মিত হবে সার কারখানা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এসইজেড, জাহাজ নির্মাণ, এনএলজি টারমিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ মোকাবিলায় থাকবে উপকূলজুড়ে সবুজ বেষ্টনী এবং ইকো-ট্যুরিজম। পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ পিপি এর সচিব মুহাম্মদ রেজাউল কবির সাংবাদিকদের বলেন, পুরো বন্দরের সব অবকাঠামো এখনো হয়নি। তবে স্বল্প পরিসরে বন্দর এখন ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। কাস্টমসের প্রাথমিক কার্যালয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ বন্দরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পাথর নিয়ে চীন থেকে জাহাজ নোঙর করেছে। এ জাহাজটি বন্দরের মূল টারমিনাল থেকে ২০ কিলোমিটার সাগরের গভীরে থেকে পাথর অপর জাহাজে খালাস করবে। রেজাউল কবির আরও জানান, আগামী ১৩ আগস্ট নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বন্দরের আনুষ্ঠানিক কাজের উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে পায়রা বন্দর চালু হলেও বন্দরটি ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি চালু হবে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে রামনাবাদ নৌ-চ্যানেলের পশ্চিমতীরে অবস্থিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৩ পাস হয়। এই আইনের আওতায় রাবনাবাদ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার মধ্যবর্তী টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া এলাকায় পায়রা প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে সরকার। প্রয়োজনীয় ড্রেজিং সম্পন্ন হলে পায়রাতে ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য জাহাজ আসতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button