অর্থ-বাণিজ্য

এনবিআরের কাজ হবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা

Image result for এনবিআর

রাজস্ব প্রশাসনকে আমূল বদলে দিতে চান সদ্য নিয়োগ পাওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

তিনি বলেছেন, আর জবরদস্তি বা হয়রানি নয়, রাজস্ববান্ধব পরিবেশে সরকারের বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সেভাবেই সবাইকে কাজ করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রতিপক্ষ ভাবা যাবে না। ভালো সম্পর্কের মাধ্যমেই সরকারের পাওনা আদায় করতে হবে। কঠোর পদ্ধতি কর আদায়ের কার্যপন্থা নয়। এমনভাবে কর আদায় করতে হবে, যাতে অর্থনীতি ও মানুষের জীবনে প্রভাব না পড়ে।
বুধবার বিকালে নিয়োগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০৩ মিনিটে প্রথম কর্মদিবসে যোগ দিকে এনবিআর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এ সময় সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং কুশল বিনিময় করেন।
এরপর তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে সবার সহায়তা কামনা করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে কর্মকর্তাদের অভিযোগ-অনুযোগ শোনেন এবং ভবিষ্যতে এনবিআরের কর্মপরিবেশ কী রকম হবে সেটির ধারণা দেন।
তিনি দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে রাজস্ব আদায় ও সততার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ভালো কাজ করলে পুরস্কার আছে। সৎভাবে চললে সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও শান্তি আছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, নতুন চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থিত কর্মকর্তারা তাদের পদোন্নতি, বঞ্চনা ও সদস্যের পদ গ্রেড-১ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপসচিব হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। সর্বশেষ শিল্প মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি।

অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন, ব্যবসা ভালো চললে, বিনিয়োগ বাড়ার সুযোগ এনবিআর করে দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর আদায় বাড়বে। সে বিষয়টাতে সবার খেয়াল রাখতে হবে।এনবিআরের কাজ হবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা।
এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, চাকরি শেষ হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে আরো ২ বছর কাজ করার সুযোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আমার ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন, যে গুরু দায়িত্বপালনের নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি সঠিকভাবে পালন করতে পারি সে জন্য সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। জাতীয় উন্নয়নে জন্য এনবিআরের যা যা করা দরকার সহকর্মীদের নিয়ে সে প্রচেষ্টা চালাব।
অভ্যন্তরীণ রাজস্বকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কড়াকড়িভাবে (হার্শ ওয়েতে) মানুষের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করার চেষ্টা করা হয়, সেটা কার্যকর পন্থা হবে না। এমনভাবে রাজস্ব আদায় করতে হবে যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগ ও মানুষের জীবনযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। যখন মানুষের জীবনযাত্রা ভালো হবে, আয় বাড়বে তখন এমনিতেই রাজস্ব আয় বাড়বে।
এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বিকালে জনপ্রশাসন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর রাত ১২টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন রাখতে পারিনি। অনবরত শুভান্যুধায়ী ও ব্যবসায়ীদের ফোন এসেছে। অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছে, আবার অনেকে পরামর্শ দিয়েছে। একটা পরামর্শ ছিল, ঢাকা শহরে যত আবাসিক ভবন আছে সেখানকার ভাড়াটিয়া বা ফ্ল্যাট মালিকের কর ফাইল আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে হবে। যারা সঠিকভাবে ট্যাক্স দেয় না তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর নাম জানি। তাদের প্রতিপত্তি, ইমেজে মুগ্ধ হই। কিন্তু ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ করদাতা নয়। এ জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের কীভাবে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে আশা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।

Back to top button