অটোমোবাইল

অবৈধ চালক ১৩ লাখ

Image result for বাস

একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ে কারও যাচ্ছে হাত, কারও পা থেঁতলে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবারও রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সুমি (৮) নামে এক শিশুর বাঁ হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার ডান হাতও গুরুতর জখম হয়। পরিস্থিতি এমন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের তালিকায় যে কারও নাম যে কোন সময় উঠতে পারে! কারণ পাশেই যমদূত বাস চালক!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী চালকরাই। অর্থাৎ বেপরোয়া বাস চালানোর কারণেই ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো বৈধ ও প্রশিক্ষিত চালক হয়ে থাকলে, কেন এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয়েছে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দফতরে। সরকারী হিসেবে দেশে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩৪ লাখ ১৯ হাজারের বেশি। ঢাকায় এই সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। এর বিপরীতে দেশে বৈধ চালকের সংখ্যা ২১ লাখ। অর্থাৎ সরকারী হিসেব অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের বিপরীতে চালক সঙ্কট ১৩ লাখের বেশি। কিন্তু অনুমোদিত যানবাহন চলাচল কি বন্ধ? গবেষণা বলছে, সরকারী হিসেবে ১৩ লাখের বেশি অবৈধ চালক। এর বাইরেও একই গাড়ি একাধিক চালক চালাচ্ছেন। অর্থাৎ দেশজুড়ে সড়ক মহাসড়ক দাবড়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ চালক। তবে অবৈধ চালকের সংখ্যা কত এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান কোন দফতরেই নেই।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, অন্তত ৫০ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে। সারাদেশে চালক রয়েছে এমন সংখ্যা অন্তত ৭০ লাখ! এই হিসেবে প্রায় ৫০ লাখ লাখের কোন নিবন্ধন নেই। এই পরিস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনা খুবই স্বাভাবিক বিষয় বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, অবৈধ চালক সামলাতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। বিআরটিএ বলছে, পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য রোধে নিয়মিত কাজ করছেন তারা। তবে জনবল সঙ্কট রয়েছে।

এ তো গেল সবার বক্তব্য। কিন্তু অবৈধ চালক সামলানোর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা আসলে চলমান সমস্যা সমাধানের পথ কী? পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সরাসরি চাপের মুখে বিআরটিএ অবৈধ পরিবহন ও চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পুলিশের ক্ষেত্রেও বাস্তবতা একই। বাস মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতা ও পুলিশের একাধিক কর্তাব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আন্দোলনের হুমকি দিয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের ভাল কাজ করতে দেয় না। অর্থাৎ গোটা পরিবহন সেক্টর এই দুই সংগঠনের হাতে জিম্মী। সংগঠনের নেতাদের ইশারায় সরকারের কর্মপন্থা নির্ধারণ হয়। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনেও মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। এতে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দোষী চালকদের প্রত্যাশিত শাস্তি হয়নি।

Back to top button