অর্থ-বাণিজ্যজাতীয়

সংশোধিত বাজেটে সার্বিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট মনিটিরিং বিভাগ ইতোমধ্যেই এ-সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি করেছে। এদিকে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও সংশোধিত বাজেটে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)-এর আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। গত তিনটি অর্থবছরের বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এবং প্রতিবছর ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে।
প্রসঙ্গত: চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বর্তমান সার্বিক রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এটা কমিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। সে হিসাবে মোট ১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হতে পারে।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরআর-এর আওতাধীন রাজস্ব বাজেট সংশোধনের পরও ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং ২৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছরই ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে।
সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে প্রকৃত আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ০১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৯ শতাংশ)। এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআর-এর আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা এবং ১ লাথ ৭১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের মতে, গত ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এনবিআর আওতাধীন কর-রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে গত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। তবে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয় মেয়াদে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে নি¤œমুখী প্রবণতা রয়েছে। অর্থ বিভাগের মতে, এনবিআর আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে ‘ভ্যাট আইন ২০১২’ বাস্তবায়ন না-হওয়া একটি অন্যতম কারণ। এ প্রেক্ষিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আয়কর আদায় জোরদার করার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৮) এনবিআরএর নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ১ লাখ ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশ) আদায় হয়েছে বলে জানা যায়। অর্থাৎ ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এমতাবস্থায়, মূল বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে চলমান অর্ধ-বার্ষিকে (জানুয়ারি-জুন ২০১৯) এনবিআর-কে আরও ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪০১ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। গত কয়েক বছরের রাজস্ব আদায় চিত্র পর্যালোচনায় চলমান অর্ধ-বার্ষিকে এত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা এনবিআর-এর জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থবছর শেষে মূল বাজেটের চেয়েও অতিরিক্ত রাজস্ব (৩ লাখ কোটি টাকা) আদায়ের জন্য এনবিআর-কে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা যায়। যদিও সম্প্রতি তিনি বলেছেন যে, আগামীতে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর-কে কোনো টার্গেট বেঁধে দেয়া হবে না, কত আদায় করতে পারবে সেটা তারা নিজেরাই ঠিক করবে।
রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অর্থ বছরের প্রথমার্ধে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় শুল্ক আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী করতে পারেনি কাস্টম হাউজগুলো। ভোটের কারণে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আহরণে মাঠপর্যায়ে বড় তদারকি বন্ধ ছিল। এখন কর্মকর্তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসে এটি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা।

Back to top button