রাজনীতি

খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ

নিউজ  ডেস্ক:সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারাখালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনও চিকিৎসা হয়নি। এমনকি কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়নি। আমাদের দাবি এই মুহূর্তে তার পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। অন্যথায় তার স্বাস্থ্যের কোনও অবনতি হলে এর দায়দায়িত্ব সরকার, কারা কৃর্তপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। এটাই নিয়ম ও আইন। কারণ তার সমস্ত চিকিৎসা দায়িত্ব তাদের।’

বুধবার(২৭ মার্চ) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন, ‘আমরা সবাই জানি আদালতের নির্দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি যখন খালেদা জিয়া কারাগারে যান, তখন সুস্থ অবস্থায় হেঁটে যান। আমরা সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষকে কারাগারে যেতে দেখেছি। সেই তিনি আজ এতোই অসুস্থ যে কারগারের কক্ষেও তিনি কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন না। সীমাহীন যন্ত্রণার মধ্য তার প্রতিটিক্ষণ যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত অক্টোবরে আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়াকে পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও চিকিৎসা না দিয়ে, যিনি তার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন, তার অনুমতি না নিয়ে আবারও গত ৮ নভেম্বর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন থেকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে কোনও চিকিৎসক দেখতে যায়নি এবং তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নাই।’

খালেদা জিয়ার যে অসুখ তা প্রতিদিন মনিটর করা দরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবে প্রতিদিন তার সুগার পরীক্ষা করার দরকার ছিল। সেই অনুযায়ী তার ওষুধ ও ডায়েট নির্ধারণ হয়। তবে গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি। আমরা বারবার কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়ার পরীক্ষার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তাকে দেখতে যান। তারা কোনও পরীক্ষা করে নাই। কারাগারে পরীক্ষা করারও সুযোগ নেই।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা কোর্টে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করছি। দেখছি তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল বোর্ড তার পরীক্ষা করে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেখানে ডাক্তার ছিলেন- ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরী, ডা. আতিকুল হক, ডা.সাহদিন আহমেদ, ডা.তানজিমা ফারবিনসহ আরও তিন জন। তাদের মেডিকেল রিপোর্ট বলা হয়েছে, তার বাম কাঁধে ব্যাথা বেড়েছে। নতুন করে ডান কাঁধেও ব্যাথা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তার শরীরের অন্য অঙ্গগুলোতেও ব্যাথা হচ্ছে। তিনি কারও সাহায্য ছাড়া নড়াচড়া ও চলাফেরা করতে পারছে না। তার লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি ও আরও অন্যান্য পরীক্ষা দরকার। এই রিপোর্ট তারা রিসিভ করেছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। খালেদা জিয়ার সব স্বাস্থ্য পরীক্ষা নির্ভর করে কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি নিজেই ৩০ বারের মতো আইজি প্রিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারি নাই। একবার ডেপুটি আইজি প্রিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রিজনের নম্বর দিয়ে বলেছেন, তিনি কিছু জানেন না। এরপর ৫ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে কথাও বলেছি। খালেদা জিয়ার পছন্দমতো ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছি।’

গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করলেও এখন পর্যন্ত তার রিপোর্ট কী তা নিয়ে অফিশিয়ালি কোনও মিটিং হয়নি বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেউ দেখা করেন নাই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল ২৬ মার্চ তার পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করেছেন। তারা বলেছেন, তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে। আমি নিজেও কোর্টে দেখেছি, খালেদা জিয়া মাথা সোজা করে রাখতে পারছেন না। পা বাঁকা করতে পারেন না। তাকে জোর করে প্রায় দিন কোর্টে হাজির করা হচ্ছে। তিনি একেবারেই সুস্থ অবস্থায় নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

Back to top button