জাতীয়

ভারতের পারমাণবিক গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ওপর সাইবার হামলার যে রিপোর্ট গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে, তার সাথে উত্তর কোরিয়ার সাইবার গ্রুপ জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এশিয়া টাইমস জানতে পেরেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল-ভিত্তিক ইস্যু মেকার ল্যাবের সাইবার নিরাপত্তা গবেষক চোই স্যাং-মাইওং এই সাইবার হামলার বিশদ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে, হামলার সর্বত্র উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের চিহ্ন রয়েছে।

ইস্যু মেকার ল্যাব এক দল সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের প্ল্যাটফর্ম, এবং এখানকার সদস্যরা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রশংসিত হয়েছে এবং কোরিয়া ইনফরমেশান অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সির বিভিন্ন সম্মেলন ও অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিয়েছে। এই গ্রুপের গবেষণার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার সক্ষমতা। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক হিসেবে এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে চোই।

পারমাণবিক গোপন তথ্য চুরি

ভারতের পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টের তথ্য চুরি করা হয়েছে উত্তর কোরিয়া থেকে।

চোই এশিয়া টাইমসকে বলে, সাইবার হামলার জন্য যে প্রধান পয়েন্টকে টার্গেট করা হয়, সে হলো অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন অব ইন্ডিয়ার (এইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের (বার্ক) ডিরেক্টর অনিল কাকোদকার। বর্তমানে গবেষণার সাথে জড়িত চেয়ার অব এক্সিলেন্সধারী কাকোদকার আর তার সহকর্মী এস এ ভারাদ্বাজ এখনও বার্কের দেয়া অফিসিয়াল ইমেইল ব্যবহার করেন। কাকোদকার থোরিয়াম-ভিত্তিক রিয়্যাক্টরের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, যেহেতু ভারতের ইউরেনিয়ামের পরিমাণ খুবই সীমিত।

ভারতের স্বতন্ত্র সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক পেশাদার পুখরাজ সিং – যে আগে সরকারের সাথে কাজ করেছে – সে প্রথম ৪ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন।

চোই বলে, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা কাকোদকার আর ভারাদ্বাজের ইমেইলে একটি ম্যালওয়্যারের লিঙ্ক পাঠায়। কাকোদকার ও ভারাদ্বাজ কুদানকুলাম প্ল্যান্টের ডোমেইন থেকে ওই লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করার সাথে সাথেই ম্যালওয়ারটি দ্রুত আইটি নেটওয়ার্কের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

চোই এশিয়া টাইমসকে বলে, “উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ভারতীয় প্ল্যান্টের আইপি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতো। তারা প্ল্যান্টের মধ্যে প্রবেশ করে কিন্তু কোন ক্ষতিকর কোড তারা পাঠায়নি। তারা ঠিক কি তথ্য চুরি করেছে, সেটা আমরা বের করতে পারিনি”।

উত্তর কোরিয়ার সাইবার যোদ্ধা

মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ তাদের ২০১৪ সালের এক রিপোর্টে বলেছে যে, উত্তর কোরিয়ার সাইবার কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান করে দুটো প্রতিষ্ঠান: রিকনেশান্স জেনারেল ব্যুরো (আরজিবি) এবং কোরিয়ান পিপলস আর্মি জেনারেল স্টাফ ডিপার্টমেন্ট।

সাইবার কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান ছাড়াও আরজিবি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোরিয়ান আর্মির বিশাল স্পেশাল অপারেশান ফোর্সকে কমাণ্ড করে। এই বাহিনীতে প্রায় দুই লাখের মতো জনবল রয়েছে যাদের মধ্যে বিমান ও নৌ কমান্ডোরাও রয়েছে। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্ট অনুসারে, ব্যুরো সরাসরি স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিশনের কাছে জবাবদিহি করে, যে কমিশনের কাছ থেকে অফিশিয়ালি ‘চেয়ারম্যান’ উপাধি নিয়ে থাকেন কিম জং উন।

রিকনেশান্স জেনারেল ব্যুরো সেল ১০১ নামের একটি ইউনিট ব্যবহার করে এবং এটাকে ব্যবহার করে তারা আগ্রাসী সাইবার অভিযান চালিয়ে থাকে। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে গোয়েন্দাবৃত্তি থেকে শুরু করে শত্রুর কমাণ্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়গুলো রয়েছে।

সাধারণ নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত থাকলেও বিচ্ছিন্ন এই দেশটির অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক সাইবার যুদ্ধ ও সাইবার অপরাধের সক্ষমতা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেটা তৈরি করা হয়েছে সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স আর্মের মাধ্যমে। এই শাখায় তাদের জনবলের পরিমাণ ১৮০০ থেকে ৫৯০০ এর মতো।

বিশ্ব জুড়ে বেশ কিছু বড় ধরনের সাইবার হামলা ও অপরাধের সাথে উত্তর কোরিয়া জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাংক ও সরকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে হামলা, ২০১৪ সালে সনি পিকচার্সের উপর হামলা, যারা কিম জং উনকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কমেডি নির্মাণ করেছিল।

Back to top button