শিক্ষা

‘ভুল বুঝে’ সৃজনশীলের আন্দোলন, দায়িত্ব শিক্ষকদের

Image result for শিক্ষা বোর্ড
ঢাকা: বহুনির্বাচনী প্রশ্নে নম্বর কমিয়ে সৃজনশীল অংশে বাড়ানোর পর ভুল বোঝাবুঝি থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে বলে মনে করছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।

সাব-কমিটি বলছে, দেশের শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনদের মতামত নিয়ে সৃজনশীল অংশে নম্বর বাড়ানো হয়েছে। এতে পরীক্ষার সময় কমেনি। এই বিষয়টি নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের বোঝানোর দায়িত্ব শিক্ষকদের।

বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ প্রশ্নে নম্বর কমিয়ে সৃজনশীল অংশে নম্বর বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দোলন করে আসছে এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীরা।

শনিবারও (০১ অক্টোবর) রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল-সমাবেশ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা ৪ অক্টোবর থেকে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ড জানায়, বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় একটি প্রশ্নপত্রকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। একটি অংশে সৃজনশীল আরেকটি অংশে বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, এতোদিন ১০০ নম্বরের একটি পরীক্ষায় সৃজনশীল অংশের নম্বর ছিল ৬০ এবং বহুনির্বাচনী অংশের নম্বর ছিল ৪০। বহুনির্বাচনীর জন্য সময় ছিল ৪০ মিনিট।

পরীক্ষার হলে বাইরে থেকে এমসিকিউ প্রশ্ন সমাধান করে পাঠানো এবং হৈ চৈ ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকার শিক্ষাবিদদের মত নিয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সংখ্যা ও সময় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ফলে বহুনির্বাচনী অংশের ১০ নম্বর কমিয়ে সৃজনশীল অংশে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ একটি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে সৃজনশীল অংশের নম্বর ৭০ করা হয়। আর এমসিকিউ অংশের নম্বর ৩০।

সৃজনশীল অংশে আগে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হলেও এখন দিতে হবে সাতটি। ছয়টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আগে সময় ছিল ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। আর এখন ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের মধ্যে সাতটির উত্তর দিতে হবে। একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর মাত্র ১০ মিনিটে দেওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি শিক্ষা বোর্ডগুলো এই নম্বর পুনর্বণ্টন করে দেয়। আর এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।

সৃজনশীলে নম্বর বাড়ানো ও সময় নির্ধারণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা ‘মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা থেকে’ বলে মনে করছেন শিক্ষাবোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, নম্বর কমানো বা বাড়ানো সমস্যা নয়, সমস্যা মনস্তাত্ত্বিক। ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারছে না বলে আন্দোলন হচ্ছে। সৃজনশীলে নম্বর বেড়েছে ১০ মিনিট। সৃজনশীলের আগে ১০ মিনিট বিরতি, ফলে তিন ঘণ্টার মধ্যে ২০ মিনিট সময়। এ নিয়ে ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই।

চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল অংশের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর পরীক্ষার মধ্যে ১০ মিনিট বিরতি পান শিক্ষার্থীরা।

গত বছর শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজনদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে জাতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে এবং শিক্ষকদের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি।

তিনি বলেন, বহুনির্বাচনী অংশে নম্বর বেশি থাকায় পরীক্ষার মাঝখানে হলে হৈচৈ এবং থামানো যেত না, এ কারণে সৃজনশীল অংশে নম্বর বাড়িয়ে প্রথমে এই অংশের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানান ড. মাহবুবুর রহমান।

এদিকে, রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button