জাতীয়

ইরফানের অব্যাহতির প্রতিবেদন শুনানি ৮ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অস্ত্র মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের (বরখাস্ত) কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের অব্যাহতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানির জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ দিন ধার্য করেন। এর আগে রোববার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস প্রতিবেদনটি ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করেন। এরপর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান। মহানগর আদালতের সেরেস্তা (নথিখানা) থেকে এটি গ্রহণ করেন।

গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ইরফান সেলিমকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। তবে তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লাকে অভিযুক্ত করে পুলিশ এই দুই মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে। এ প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মামলাটির গোপন ও প্রকাশ্য তদন্ত, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনাস্থলের জব্দ তালিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের শয়নকক্ষ উল্লেখ করা হলেও সেটি তার শয়নকক্ষ নয়, অতিথিকক্ষ। ঘটনাস্থলের বাড়িটির মালিক ইরফান সেলিমের বাবা হাজী মোহাম্মদ সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। পুরো পরিবার একটি রাজনৈতিক পরিবার বলে ওই অতিথিকক্ষে আগন্তুক অতিথি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী আসেন। তাছাড়া অভিযুক্ত ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ায় এলাকার সাধারণ জনগণও আসেন তার সঙ্গে একান্তে দেখা-সাক্ষাৎ করতে।

অভিযুক্ত ইরফান সেলিম ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কানাডায় বিবিএ পড়াশোনা শেষ করেছেন উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেন, গ্রেফতার ইরফান সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্যের উত্তরসূরি। তাই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট এবং সমাজে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ন ও হেয়প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে কে বা কারা মামলায় জব্দ করা অস্ত্র, পিস্তলটি ২৬ নং ‘চাঁন সর্দার দাদাবাড়ী’র চতুর্থ তলার অতিথি কক্ষে রেখেছেন তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের ইতিবৃত্ত পর্যালোচনায় এলাকায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, এ মামলার জব্দ করা আলামত পিস্তলের বিষয়ে মামলার বাদী এজাহারে ও জব্দ তালিকায় কার অস্ত্র এবং কার দেখানো মতে জব্দ করা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি। মামলার প্রকাশ্য ও গোপন তদন্তে, গৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়নি। তাই মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহিত দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ২৫ অক্টোবর নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের গাড়িটি তাকে ধাক্কা মারে। এরপর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে ইরফানের সঙ্গে থাকা অন্যরা একসঙ্গে তাকে কিল-ঘুষি মারেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালগালিও করেন তারা।

এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর সকালে ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মো. জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করে ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। ওই দিনই পুরান ঢাকার বড় কাটরায় ইরফানের বাবা হাজী সেলিমের বাড়িতে দিনভর অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের সাজা দেন।

এরপর ২৮ অক্টোবর র্যাব-৩ এর ডিএডি কাইয়ুম ইসলাম চকবাজার থানায় এরফান সেলিম ও দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক চারটি মামলা করেন।

Back to top button