অর্থ-বাণিজ্য

মোবাইলেই মিলছে ব্যাংকের সব লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকিং লেনদেনে বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্যাংকগুলো তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি সব ধরণের লেনদেন সহজ করেছে। সহজ বলতে, ব্যাংক লেনদেন করতে এখন আর জেলা শহর বা উপজেলা শহরে যাওয়ার দরকার হচ্ছে না। ঘরে বসেই লেনদেন করা যাচ্ছে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে। অ্যাকাউন্টও খোলা যাচ্ছে ঘরে বসেই।

ঘরে বসেই সরকারি খাতের সবচেয়ে বেশি শাখার সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বেশি শাখার ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের এই বড় দুটি প্রতিষ্ঠান লেনদেন সহজ করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ দিয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের লেনদেন করা যাচ্ছে। অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের আড়াই কোটি গ্রাহক এখন তাৎক্ষণিক বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা আনতে পারছেন এবং বিকাশ থেকে সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমাও দিতে পারছেন।

একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা আনা এবং বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অগ্রণী ব্যাংকে হিসাবে টাকা জমা করা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল ব্যাংক বলে খ্যাত এমক্যাশ অ্যাকাউন্টে এবং এমক্যাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলামী ব্যাংকের যে কোনও অ্যাকাউন্টে টাকা আনা ও জমা করা যাচ্ছে। এমক্যাশ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘরে বসেই বেতন নিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া সেলফিন অ্যাপস দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। চেকবিহীন লেনদেন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। গ্রাম-গঞ্জের বাজারগুলোতে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় আড়াই হাজার এজেন্ট শাখার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই এজেন্ট শাখাগুলোতে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে ফিঙ্গার দিয়ে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন শত শত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুধু তাই নয়, যেখানে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখা রয়েছে, সেখানে মুল ব্যাংকের সব ধরণের সেবা মিলছে। লাখ লাখ টাকা উঠাতেও শহরের কোনও ব্যাংকে যাওয়া লাগছে না। যে কোনও পরিমাণ টাকা জমা করতে এবং যে কোনও ব্যাংকে যে কোনও পরিমাণ টাকা পাঠানোর জন্যও জেলা বা উপজেলা শহরে যেতে হচ্ছে না। লাখ লাখ টাকার ইএফটি, আরটিজিএস সবই হচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের বাজারে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট থেকেই।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, প্রতিযোগিতায় সবাই এগিয়ে থাকতে চায়। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকই তাদের গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে সচেষ্ট। মোবাইলে লেনদেনকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুযোগ বলে মনে করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যারা এগিয়ে থাকবে, তাদের গ্রাহকরাও এগিয়ে থাকবে। তারা বাজারে জনপ্রিয় হবে।

এদিকে সেলফিন ও এমক্যাশকে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকটির কার্ড ব্যবহার করা যায় বিশ্বের যেকোনও দেশে। শুধু তাই নয়, নগদ টাকা জমা দিতেও এখন আর যেতে হয় না ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন একটি স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ। যেকোনও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট, কার্ড ও এমক্যাশ নম্বরে সরাসরি টাকা পাঠানো যায় সেলফিন থেকে। টাকা নেওয়া যাচ্ছে বিকাশ, নগদ ও রকেটেও। আর যেকোনও ব্যাংকের ভিসা বা মাস্টারকার্ড, ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট ও এমক্যাশ থেকে টাকা আনা যাচ্ছে সেলফিনে। এতে রয়েছে ভিসা সুবিধা সংযুক্ত একটি ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ড। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি যেকোনও সাইটে ই-কমার্সের পেমেন্ট দেওয়া যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা বলেন, ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল প্রোডাক্ট ও সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংক নেতৃত্বের ভূমিকায় আছে। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন আই ব্যাংকিং ও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট সবই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। সেলফিন অ্যাপস সব ধরণের লেনদেনকে আরও সহজ ও স্বচ্ছন্দ করেছে।

অবশ্য কেবলমাত্র মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) মাত্র তিন বছরে লেনদেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একইভাবে গ্রাহকও বেড়েছে দ্বিগুণ হারেই। এর ফলে এখন দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে বিকাশ, রকেটের মতো সেবার মাধ্যমে। তিন বছর আগেও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। এ খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-কে হিসাবে ধরলে দৈনিক লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

Back to top button