অর্থ-বাণিজ্য

রাজস্ব ফাঁকির সাড়ে চার কোটি টাকা শোধ করল লাফার্জহোলসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিমের বিরুদ্ধে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

প্রতিষ্ঠানটির ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিরীক্ষা করে এই রাজস্ব ফাঁকির তথ্য বের করেছে মূসক গোয়েন্দা। নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসা তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে লাফার্জহোলসিম কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সুদসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিরীক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর লাফার্জহোলসিম কর্তৃপক্ষের কাছে নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট দলিল উপস্থান করতে বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ের দলিলাদি উপস্থান করে। এসব দলিল নিরীক্ষায় চার কোটি ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৩ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে।

এর মধ্যে অপরিশোধিত মূসক এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৬ টাকা। অবৈধভাবে গ্রহণ করা রেয়াত ৭৫ লাখ ২৭ হাজার সাত টাকা রয়েছে। এর সঙ্গে সুদ বাবদ যোগ হয়েছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৮০ টাকা। এ টাকা প্রতিষ্ঠানের নিকট মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) ও (৩) অনুযায়ী আদায়যোগ্য।

মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, লাফার্জহোলসিম চার কোটি ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৩ টাকার যে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রযোজ্য উৎসে মূসক থেকে ট্রেজারি চালান অনুযায়ী পরিশোধিত উৎসে মূসক বাদ দিয়ে অপরিশোধিত উৎসে মূসক তিন কোটি ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬৪ টাকা। বাড়ি ভাড়া খাতে প্রযোজ্য উৎসে মূসক থেকে ট্রেজারি চালান অনুযায়ী পরিশোধিত উৎসে মূসক তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ টাকা।

এছাড়া মূল্য ঘোষণা অনুযায়ী মোট উপকরণ থেকে অতিরিক্ত উপকরণ ব্যবহারের জন্য বাতিল করা রেয়াত এক হাজার ৪৭৯ টাকা এবং মূল্য ঘোষণা থেকে অতিরিক্ত রেয়াত গ্রহণের জন্য বাতিল করা রেয়াত ৭৫ লাখ ২৫ হাজার ৫২৮ টাকা রয়েছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, লাফার্জহোলসিম কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে রাজস্ব ফাঁকির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা দলিলাদিতে কোনো অসত্য তথ্য বা জালিয়াতি পরিলক্ষিত হলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে এবং অসত্য তথ্যের কারণে ভবিষ্যতে নিরুপিত মূসকের অতিরিক্ত কোনো মূসক প্রদেয় হলে, তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, পরিহার করা মূসকের বিষয়ে লাফার্জহোলসিম কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি শুনানিতে ডাকা হয়। শুনানিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ একমত পোষণ করে স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে চূড়ান্ত করা টাকা পরিশোধ করেছে বলে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে জানায়।

প্রতিষ্ঠানটির এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তি অনুসারে টাকা পরিশোধ করার বিষয়টি আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লাফার্জহোলসিমের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন ম্যানেজার তহিদুল ইসলাম ইমেইলে লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। এরপর ইমেইলে লিখিত তিনটি প্রশ্ন পাঠানো হয়।

এর উত্তরে লাফার্জহোলসিমের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট নীরিক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের নিরীক্ষায় ২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের রাজস্ব পরিহারের কোনো বিষয় নেই। নিরীক্ষা অনুযায়ী উৎসে মূল্য সংযোজন কর কর্তন হার নিয়ে দ্বিমত ছিল, যা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তা পরিশোধ করা হয়েছে।’

Back to top button