লাউয়াছড়া ও মাগুড়ছড়া থেকে খাসিয়াদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত


মৌলভীবাজারমৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায় ন্যাশনাল পার্ক ও মাগুরছড়ায় বসবাসকারী দুইটি খাসিয়া পুঞ্জির লোকজনকে স্থানান্তরের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বনবিভাগ। আর খাসিয়া আধিবাসীর অভিযোগ, তাদের না জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের প্রস্তাব পাঠানো অমানবিক।

সিলেট বন্যপ্রাণী প্রকৃতি ও সরক্ষরণ বিভাগের ডিএফও মিহির কুমার দো এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘খাসিয়া পুঞ্জিতে অবস্থানকারীদের বনের মধ্য থেকে সরিয়ে বাফার জোনে নেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাফার জোনে স্থানান্তর করার বিষয়ে সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। জায়গা দেখা শেষ হলেই খাসিয়া পুঞ্জির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাসিয়া পুঞ্জি স্থানান্তরে প্রাথমিকভাবে বাফার জোন হিসেবে কালাছড়া ও চাউতলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’

মিহির কুমার দো  আরও বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে লাউয়াছড়ার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবীর বিন আনোয়ার। ওই বৈঠকে এর মধ্যে কোর জোনে থাকা লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া পুঞ্জি স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুর্নবাসনের জন্য যত অর্থের প্রয়োজন, তা দেওয়া হবে। গেল অক্টোবর মাসে লাউয়াছড়ায় অনুষ্ঠিত সিএমসির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।’

জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ভিলেজার হিসেবে ৬৩টি পরিবারকে জমি লিজ দেওয়া হয়। সেই সময়ে ৪০টি পরিবারকে ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে আর ২৩টি পরিবারকে ২ নম্বর কম্পার্টমেন্টে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রত্যেক পরিবারকে আড়াই একর করে আর ২ পুঞ্জির ২ হেডম্যানকে সাড়ে ৪ একর করে জমি লিজ দেওয়া হয়। যা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করার কথা ছিল।

বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ১৬১ দশমিক ৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয় খাসিয়াদের। কিন্তু খাসিয়ারা ঠিক কতোটুকু জায়গা দখল করে রেখেছেন তার হিসেবে নেই খোদ বন বিভাগের কাছেও।

অন্যদিকে খাসিয়াদের প্রতি বছর চুক্তি নবায়ন করার কথা। যথারীতি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর নবায়নের অনুমোদন দেয়নি বন বিভাগ।

লাউয়াছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিশন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ‘আমরা আদিকাল থেকে এখানে অবস্থান করে আসছি। এই বন সৃষ্টির পেছনে আমাদের অবদান অনেক বেশি। পুঞ্জি স্থানান্তরের বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই আপত্তি থাকবে আমাদের। আমরা আশা করবো, সরকার অবশ্যই আমাদের দিকটাও বিবেচনা করবে।’

উল্লেখ্য, খাসিয়ারা লাউয়াছড়া ও মাগুড়ছড়া বনে পান চাষ করেন। সাম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গাছের ডাল-পালা ও ঝোঁপ-জঙ্গল পরিস্কার করার কারণে বন্যপ্রানীর জীবন বিপন্ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে।