কৃষি

গ্রীষ্মের শেষে বাজারে আসবে ‘ইলামতি’ আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদাদাতা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের নতুন নাবি (বিলম্বে ফলন হয়) জাতের সন্ধান মিলেছে। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের এ জাতের আমটিকে সংগ্রামী কৃষক নেতা ইলামিত্রের নাম অনুসারে ইলামতি রাখার প্রস্তাবও দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। প্রকৃত আম প্রেমীদের অসময়ে খাওয়ার চাহিদা মিটাবে এ জাত, এমনটিই বলছে কৃষি বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার গোমস্তাপুরে একটি আম বাগানে ইলামতি আমের ৫টি গাছ ছিল। সাধারণত ওই বাগান মালিক এ গাছগুলোকে গুটি জাতের আম হিসেবে ধারণা করতেন। উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার এলাকায় আতিকুল ইসলামের আম বাগানে দেখা মিলেছে এই নাবি জাতের আম।

আতিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে প্রচলিত আমগাছের পাশাপাশি ইলামতি আমের ৫টি গাছ ছিল। সাধারণত এ আমের গাছগুলোকে গুটি কিংবা আশ্বিনা আমের সাথে বিক্রি করে দিতাম। গত ২০১৬ সালের আমের মৌসুমের শেষ দিকে ভাবলাম, এ ৫টি গাছের আম পাড়বো না। পর্যবেক্ষণ করে দেখবো এবার কতদিন পর এ গাছের আমগুলো পাকে। দেখলাম অক্টোবর মাসের প্রায় মাঝামাঝিতে আমগুলো পাকছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে বছর তিনেক পার হলে আমি চৌডালা ইউনিয়নের তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ ইসলামকে জানাই। এরপর তিনি নিজে সেই মৌসুমে পর্যবেক্ষণ করেন গাছের বৈশিষ্ট্যগুলো। কিছু দিনের মাথায় হাবিবুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে বদলি হন। বদলি হলেও হাবিবুল্লাহ গাছগুলো পর্যবেক্ষণেই রেখেছিলেন।

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, আমের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে বেশ কয়েক বছর আগে আতিকুলের কাছ থেকে ৩০টি ডগা নিয়ে নাচোলে বাগান গড়ে তুলেছেন জালাল নামের একজন আম বাগানি। তার বাগানেও প্রায় ১৮০টি গাছ আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আমরা জানি এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ইলামিত্র অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কৃষকদের প্রতি ইলামিত্রের ত্যাগ ও ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নাবি জাত হিসেবে খ্যাত আমটির নামকরণ ‘ইলামতি’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নাবি জাত হিসেবে গৌড়মতি মুক্তায়িত করেছিলাম। আমাদের সন্ধান পাওয়া এই আমটি গত ২ বছর পর্যবেক্ষণ করেছি। এ আমের মিষ্টতা গৌড়মতি আমকেও ছাড়িয়েছে। যারা প্রকৃত আমপ্রেমী, তাদের হতাশ কবরে না এ জাত। সাধারণত আশ্বিনা দিয়ে আমের মৌসুম শেষ হয় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে; কিন্তু এ জাতের আমটি অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে পাকা শুরু করবে, থাকবে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। নাবি জাত হিসেবে আমটি সম্ভাবনাময় জাত। নতুন জাত হিসেবে এর মুক্তায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ হাবিবুল্লাহ বলেন, এ আমটি চেনার উপায় হলো, ঠোঁট স্পষ্ট- বোটার নিকটবর্তী পেটের দিকের অংশে সুরমার দাগ বিদ্যমান। আকার-আকৃতি লম্বা ৫.৫ ইঞ্চি। আমটির ওজন ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম হয়। ভক্ষণযোগ্য অংশ ৩৯৪ গ্রাম। লম্বা ৩.৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১.৫ ইঞ্চি। চামড়ার রঙ হালকা সবুজ। মিষ্টতার পরিমাণ ২১.২২ শতাংশ।

Back to top button