রেঞ্জ অফিসের সামনে দিয়ে কাঠ পাচার, নিরব দর্শক বন বিভাগ

লামা প্রতিনিধি :
বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলায় লামা বন বিভাগের ডলুছড়ি রেঞ্জ অফিসের সামনে দিয়ে, গজালিয়া ইউপি ও আজিজনগরের বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে রাস্তা ব্রিজ কালভার্ট ধ্বংস করে বড় টি এক্স ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রলির মাধ্যমে পরিবহন করে ফাইতং এ অবস্থিত অবৈধ ইট ভাটা ও তামাক চুল্লির জ্বালানী হিসাবে সরবরাহ করছে প্রভাবশালী লাকড়ি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
এদিকে দফায় দফায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বনজ সম্পদ কাঠ জব্দ করা হলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে অদৃশ্য শক্তির জোরে লাকড়ি পাচার অব্যাহত রাখছে সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গজালিয়া ইউপির গাইন্দা পাড়া, মোহাম্মদ পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া ও ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দারা জানায় অতিরিক্ত লাকড়ি ও পাথর বোঝাই বড় ট্রাক চলাচলের কারণে গজালিয়া বাজার হতে ডিসি রোড আসার রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এলাকার জনসাধারণকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়, যা বর্ষাকালে মারাত্মক আকার ধারণ করে, ডিসি রোড় এলাকার বাসিন্দারা জানান প্রতি বছর ভারি যানবাহন পাথর ও লাকড়ী পরিবহনের কারণে লামা কেয়াজু পাড়া সড়কটির অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনে চলাচল করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ইট ভাটায় ইট পোড়ানো ও তামাক চুল্লিতে তামাক কিউরিং শুরু হওয়ার সাথে সাথে জ্বালানী হিসাবে কাঠ ব্যবহারের জন্য গজালিয়া ইউপি ও আজিজনগর ইউপি হতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক্টরে করে লামার ফাইতং এর ১৫টি ইট ভাটা ও তামাক চাষীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ইট ভাটার চুল্লিগুলোতে সাধারণত গামারি, গর্জন, আকাশমনি একাশিয়া, রেইনট্রি ও বিভিন্ন ধরনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব কাঠের অধিকাংশ ১০০ থেকে ১২০ টাকা মণ দরে কিনছেন ইট ভাটার মালিক ও তামাক চাষীরা
জানা গেছে, লামা উপজেলার কাঠ এখন লামা উপজেলায় সীমাবদ্ধ নেই; কক্সবাজারের, চকরিয়া এবং চট্রগ্রামের লোহাগাড়ার বিভিন্ন ইট ভাটায় পাঠানো হচ্ছে। এর বেশির ভাগ সংরক্ষিত বনাঞ্চল অশ্রেণীভুক্ত বন ও সামাজিক বনের গাছ।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের মিয়া বলেন, কাঠ (লাকড়ি) পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী কয়েক বছরে লামার হাজার হাজার একর বনাঞ্চল বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়বে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চুল্লি মিস্ত্রি জানান ১২ লাইন প্রতি লাইনে ৫ হাজার করে মোট ৬০ হাজার ইট পোড়াতে দৈনিক ৬০০ হতে ৮০০ মণ লাকড়ির প্রয়োজন হয়। এ হিসাবে প্রতি মৌসুমে ১৮২ দিনে প্রতিটি ইট ভাটায় কমপক্ষে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪ শত মণ লাকড়ির প্রয়োজন হয়।
এ ব্যাপারে লামা বন বিভাগীয় কর্মকর্তা কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের টহল টিম রয়েছে। তারা কাজ করছে। তারপরও অবৈধভাবে কাঠ পাচারের তথ্য পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব ।
তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, ইট ভাটায় কাঠের ব্যবহার দ্রুত রোধ করা না হলে সবুজে ঘেরা বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার প্রাকৃতিক সৈান্দর্য হারিয়ে যাবে।
সুত্রঃ পার্বত্যনিউজ