আন্তর্জাতিকআবাসনভ্রমণ

নেপালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর তৈরি বহু বাড়িঘরই ভঙ্গুর: মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ

নেপালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে এই প্রতিবেদনটি লিখে পাঠিয়েছেন বিবিসির নেপালি ভাষা বিভাগের সাংবাদিক ফানিন্দ্রা দাহাল

নেপালে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর গ্রামাঞ্চলে যেসব বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছিলো, মানসম্মত না হওয়ার কারণে তার অর্ধেকেরও বেশি পুনরায় নির্মাণের কথা বলছে পুনর্গঠন বিষয়ক সংস্থা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, আইন কানুন অমান্য করে এসব বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। ফলে জাতীয় পুনর্গঠন কর্তৃপক্ষ এখন এবিষয়ে নতুন কিছু নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে।

নেপালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প আঘাত হানার দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে কর্তৃপক্ষ নিরাপদ বসতি নির্মাণের এই উদ্যোগ নিলো।

সাত দশমিক আট মাত্রার এই ভূমিকম্প আঘাত হানে ২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল যাতে নয় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং দশ লাখ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। জাতিসংঘ বলছে, এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ মানুষ।

এই পুনর্গঠনের কাজও চলেছে খুব ধীর গতিতে। কর্মকর্তারাই বলেছেন, ভূমিকম্পে যেখানে আট লাখ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২২,০০০ বাড়ি পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়িঘর নতুন করে নির্মাণের কাজ চলছে।

বলা হচ্ছে, নতুন করে যেসব বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে তার অনেকগুলোই অত্যন্ত নিচু মানের।

জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার প্রধান গোভিন্দ রাজ পোখারেল বিবিসিকে বলেছেন, ভূমিকম্পের পর গ্রামাঞ্চলে যেসব বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে তার অনেকই হয়তো আবার বড় রকমের ভূমিকম্প হলে টিকে থাকতে পারবে না।

এবিষয়ে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব বাড়িঘরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে তারা সরকারের প্রতিও আহবান জানিয়েছেন।

সিন্ধুপালচোক জেলা সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ওই ভূমিকম্পে। সেখানকারই একটি গ্রামের বাসিন্দা তারা বাহাদুর কানওয়ারের বাড়ি সেসময় বিধ্বস্ত হয়। পরে তিনি আবার নতুন করে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। এই বাড়িটি তিনি তৈরি করেছেন মাটি, পাথর এবং কাঠ দিয়ে।

বাড়িটি তৈরি করতে সরকারের কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার রুপি সাহায্য পেয়েছিলেন। কিন্তু পুরো কাজ শেষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ রুপি। তিনি জানান, বাকি অর্থ তাকে ঋণ করতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন করে তৈরি বহু বাড়িঘরই ভঙ্গুর

বলা হচ্ছে, বাড়ি নির্মাণের নীতিমালা না মেনেই তার নতুন বাড়িটি তৈরি হয়েছে। ফলে তিনি আর ঋণ সাহায্য পাবেন না।

এজন্যে তিনি সরকারকেই দোষারোপ করে বলেছেন যে তিনি কারো কাছ থেকে এবিষয়ে সাহায্য পান নি।

“বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করতে কোন ইঞ্জিনিয়ার আমার গ্রামে আসেনি। ফলে আমি নিজেই বাড়িটি তৈরি করেছি,” বলেন তিনি।

মি. পোখারেল বলেছেন, এরকম ৫০ শতাংশ বাড়িঘরই মানসম্মত নয়। ফলে সরকার এখন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নামছে। তার একটি হলো এই বাড়িগুলোকে মজবুত করে তোলা। তৈরি হচ্ছে মাটি ও কাঠ দিয়ে তৈরি নতুন বাড়ি।

তিনি বলেন, গ্রামবাসীদেরকে আমার ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আইনেও কিছু পরিবর্তন আনার কথা ভাবছি যাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আরো অর্থ সাহায্য দিতে পারি।”

এই প্রকল্পের একজন পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাপেন্দ্র বাহাদুর খাদকা বলেছেন, সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের কারিগরি সহযোগিতা ছাড়াই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের এরকম ১৮ হাজারেরও বেশি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এগুলোর একটা বড় অংশই নিচু মানের এবং এসব আরো মজবুত করা প্রয়োজন।

Back to top button