পদ্মায় জেগে ওঠা চরে টমেটোর বাম্পার ফলন
দুই দফা বন্যায় ধুয়ে গেছে পদ্মার চর বানের স্রোত সব ধুয়ে-মুছে নিয়ে যাওয়ার পর জমিতে ফেলে রেখে গেছে শুধু পলি। নদীর সেই ফেলে রাখা পলিতেই এবার বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন ফসল হারানো বিপন্ন কৃষকেরা। রাজবাড়ী সদরের পদ্মা নদী ঘেঁষা চরজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ, মাঝে মাঝে রঙিন মার্বেলের মতো গড়াগড়ি দিচ্ছে লালচে টমোটো।
জানা যায়, জেলা সদরের বরাট, মিজানপুর, চন্দনী ও খানগঞ্জ ইউনিয়নের ৩শ’ হেক্টর চরের অর্ধেক জায়গাজুড়েই হয়েছে সবজি চাষ, যার মধ্যে ১২০ হেক্টরেই হয়েছে টমেটোর আবাদ। বন্যা পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা চরে চাষ করা হয়েছে উন্নত জাতের টমেটো। বানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম ও নামী পদ্ধতিতে চাষ করা টমেটোই এবার হাসি ফুটয়েছে কৃষকের মুখে।
কৃষকেরা জানান, বন্যার পানিতে উজান থেকে ভেসে আসা পলির কারণে চরের জমি উর্বর হয়েছে। যার ফলে কোনও প্রকার ক্ষতিকারক সার ও কীটনাশক ছাড়াই টমেটোর বাম্পার ফলন ফলেছে। রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার না থাকায় রাজবাড়ীর টমেটো এবার স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজবাড়ীতে ৮২৮ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছিল। আর এ বছর ৮২৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে ৩০০, গোয়ালন্দে ৩৫০, পাংশায় ১২০, কালুখালীতে ৩৫ ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে আড়াই টনের বেশি টমেটো উৎপাদন হয়।
এ ব্যাপারে জেলা সদরের বরাট ইউনয়নের টমেটো চাষি আব্দুর রশীদ শেখ জানান, ‘এবার পদ্মার চরের জমি পলি মাটিতে অধিক উর্বর হয়েছে। জমিতে বিপুল, বিগল, বিউটিফুল, হাইটম, সফলসহ অন্যান্য জাতের টমোটো চাষ করায় হেক্টরপ্রতি প্রায় ৬শ’ মণ ফলন হয়েছে। এখন বাজারে দাম ভালো পেলেই কৃষকেরা লাভের মুখ দেখবে। পুষিয়ে নিতে পারবে বন্যার সময়কার মাস তিনেকের ক্ষতি।’ পাশাপাশি জেলা সদর কৃষি অফিস থেকে পাওয়া পরামর্শে চাষাবাদ করায় গতবারের চেয়ে টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চাষি জমেলা বেগম জানান, তার স্বামী ওমবার সরদারের সঙ্গে তিনিও পদ্মার চরে টমেটো চাষ করেছেন। এখন ফসল ঘরে তোলার কাজ চলছে। টমেটো বাজারে বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভালোভাবে সংসার চলছে।
আরেক চাষি নাসিমা বেগম বলেন, ‘পদ্মায় জেগে ওঠা চরে টমেটোর চাষ করে এলাকার অনেকে লাভবান হয়েছেন। টমেটো সংগ্রহের কাজ করে এলাকার নারী পুরুষেরা টাকা পাচ্ছেন। এতে তাদের আয় হচ্ছে।’
স্থানীয় ব্যাপারী আব্দুল মুন্নাফ সরদার জানান, তিনি রাজবাড়ীর বরাট ইউনিয়ন থেকে টমেটো কিনে ঢাকার কোনাবাড়িতে বিক্রি করেন। দেখতে ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় রাজবাড়ীর টমেটোর চাহিদা অনেক বেশি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন জানান, নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও প্রদশর্নীর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করায় রাজবাড়ী সদরের বরাট, মিজানপুর, চন্দনী ও খানগঞ্জ ইউনিয়নের ৩শ’ হেক্টর চর জমির মধ্যে এবার ১৫০ হেক্টর জমিতে হয়েছে সবজি চাষ। যার মধ্যে ১২০ হেক্টরেই কৃষকেরা আবাদ করেছেন টমেটো। টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজবাড়ী সদরের টমেটো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন কৃষকেরা।