ইসলামি ক্যালেন্ডারশিক্ষা

মাসের সংখ্যা বিন্যাসের ক্ষেত্রে আত তাক্বউইমুশ শামসীতে সুবিধা ও অন্যান্য সৌরসনের অসুবিধা

ঈসায়ী সনের হিসাব : মহাকাশবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এক সময় মানুষ জানতে পারে যে, এক সৌর বছর সমান ঠিক ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা বা ৩৬৫.২৫ দিন নয়। বরং তার চেয়ে কিছুটা কম। তাছাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ ৩২৫ ঈসায়ী সনে হিসাব করে ২১ মার্চ দিবারাত্রি সমান হওয়ার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু ১৫৮২ ঈসায়ী সনে এসে সে হিসাব আর মিলছে না। বরং ২১ মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চ দিবারাত্রি সমান হচ্ছে। ফলে ক্যালেন্ডারের নির্ধারিত বসন্তকাল শুরু হওয়ার ১০ দিন আগেই প্রকৃতিতে বসন্তকাল শুরু হয়ে যাচ্ছে। এটা উপলব্ধি করেই ক্যালেন্ডার সংস্কার করা হয়।
তখন হিসাব করে দেখা যায়, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে গড়ে এক বছর সমান ধরা হয়েছে ৩৬৫.২৫ দিন, কিন্তু বাস্তবে এক সৌর বছর সমান হলো ৩৬৫.২৪২২ দিন। এর ফলে প্রতি বছর প্রায় ১১ মিনিট করে প্রকৃতির সাথে ক্যালেন্ডারের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই ৩২৫ ঈসায়ী সনের হিসাবের সাথে ১৫৮২ ঈসায়ী সনের হিসাব মিলছে না। অর্থাৎ এই (১৫৮২ – ৩২৫ = ১২৫৭ বছরে) ১২৫৭ বছরে প্রকৃতির সাথে ক্যালেন্ডারের ব্যবধান হয়ে গেছে (৩৬৫.২৫ – ৩৬৫.২৪২২)ী১২৫৭ দিন অর্থাৎ প্রায় ১০ দিন।
এ কারণে প্রতিবছর ঋতুর আরম্ভকাল একটু একটু করে সরে এসেছে। ফলে খ্রিস্টানদের ইস্টার দিবস গ্রীষ্ম ঋতুতে চলে আসছে, যা তাদের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। এই ভুল সংশোধনের জন্য ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ক্যালেন্ডার থেকে ১০ দিন বাদ দেওয়া হয়। এ কারণেই সে বছর ৪ অক্টোবরের পরের দিন ৫ অক্টোবর না ধরে ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। আর একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য ৪ দ্বারা বিভাজ্য সালগুলোকে লিপ ইয়ার ধরার পদ্ধতিতেও কিছুটা সংস্কার আনা হয়। হিসাব করে দেখা যায় যে, প্রতি ৪০০ বছরে এই ভুলের কারণে প্রায় ৩ দিনের ব্যবধান হতো। তাই পোপ ঘোষণা করে যে, এখন থেকে ৪ দ্বারা বিভাজ্য সালকে লিপ ইয়ার ধরার পদ্ধতি ঠিক থাকবে কিন্তু এ নিয়ম শতাব্দীর শেষ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে না। শতাব্দীর শেষ বছর সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হওয়ার পাশাপাশি ৪০০ দ্বারাও বিভাজ্য হলেই কেবল তাকে লিপ ইয়ার বলা যাবে। আর এ কারণেই বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ এবং ২১০০ এই সালগুলি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হলেও লিপ ইয়ার নয়। অপর দিকে ১৬০০, ২০০০ এবং ২৪০০ সালগুলি ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হওয়ার কারণে লিপ ইয়ার। ১৫৮২ ঈসায়ী সনে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরিয়ান কর্তৃক প্রবর্তিত এই নিয়ম এখনো চলছে। আর পোপের কারণে এ ক্যালেন্ডারের নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার রাখা হলেও আমরা একে সাধারণত ইংরেজী ক্যালেন্ডার বলেই অভিহিত করি। তবে বিভিন্ন দেশে এটা ওয়েস্টার্ন ক্যালেন্ডার বা খ্রিস্টিয়ান ক্যালেন্ডার নামেও পরিচিত।
ফসলী সনের হিসাব : সূর্য সিদ্ধান্ত মতে, এক বছর হল ৩৬৫.২৫৮৭৫৬ দিন। কিন্তু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এক বছর হল ৩৬৫.২৪২২ দিন। অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে ফসলী সনের ক্যালেন্ডার বছরে ০.০১৬৫৫৬ দিন বা ২৩ মিনিট ৮৪ সেকেন্ড বেশি। তার মানে ১৪২০ বছরে দিন বেড়ে গিয়েছে ১৪২০ী০.০১৬৫৫৬ দিন বা ২৩.৫০৯৫২ দিন বা ২৪ দিন। এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেল ১লা বৈশাখ ২১ মার্চ না হয়ে কেন এখন ১৪ বা ১৫ এপ্রিল হয়। তার মানে, প্রতি ৬০ বছরে ফসলী সনের ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে একদিন করে বেড়ে চলেছে। ফসলী সনের ক্যালেন্ডার প্রণেতাদের এই ত্রুটি সংশোধনের কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। এমনটা যদি চলতেই থাকে তবে ৯৫০ বছর পরে মে দিবস আর ফসলী নববর্ষ পালিত হবে একই দিনে!
আবার ফসলী সনের দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন ধরলে হিসাব হয় অন্যরকম। কিন্তু পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড লাগে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য গ্রেগরিয়ান সালে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারী মাসের সাথে একদিন যোগ করা হয় (শুধু যে শত বছর ৪০০ দিয়ে ভাগ হয় সে বছর যোগ করা হয়না)। শুরুর দিকে ফসলী সনের এই অতিরিক্ত সময়কে গনণায় নেয়নি। পরে এই ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে এবং ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিচালনায় একটা কমিটি গঠন করা হয় ১৯৬৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী। পরে কমিটির সুপারিশ-এ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসকে ৩১ দিনের এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসগুলো ৩০ দিনের হিসাবে গনণা করা শুরু হয়। আর প্রতি চার বছর পর পর চৈত্র মাসকে ৩১ দিন ধরা হয়। আর এভাবেই আজকের এই ফসলী সনের প্রচলন হয়।
শামসী সনের হিসাব : একটি সৌর বছরের সময়কাল হচ্ছে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। ফলে দেখা যায় নতুন বছর শুরু করলেও পৃথিবীর ঘূর্ণনের তখনো বাকী থাকে। এক সময় (অনেক বছর পর পর) ঘড়ির সময়ের সাথে এই পার্থক্য অনেক হয়ে যায়। কিন্তু শামসী সনে যেভাবে মাসের দিনগুলো সাজানো হয়েছে এর ফলে এই পার্থক্য বছরে মাত্র ০.২ সেকেন্ডেরও কম।

Back to top button