রিজার্ভ চুরির হোতা উইক্যাং’কে খুঁজছে ফিলিপাইন

 

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্খ লোপাটে জড়িত চীনা ব্যবসায়ী উইক্যাঙ ঝু’র অবস্থান চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপাইনের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সিনেট কমিটি (সংসদীয় কমিটি)। সিনেট কমিটির সদস্য সার্জি ওসমেনা সোমবার ন্যাশনাল বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এ নির্দেশ দেন।

সিনেট কমিটি, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ও রিজাল ব্যাংকের পৃথক তদন্তে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্টের লোপাট হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কির ডলার ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। এ টাকার ৬’শ মিলিয়ন পেসো নিয়েছেন চীনা এ ব্যবসায়ী।

রিজার্ব অ্যাকাউন্ট থেকে স্মরণকালে বৃহত্তম অর্থ লোপাটের এ ঘটনায় স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ফিলিপাইন সরকার। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে রেনি আলমেনড্রাস এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘আমরা অর্থ লোপাটের এ ঘটনায় যতটা সম্ভব সহযোগিতা করছি, এটা অব্যাহত থাকবে।’

আলমেনড্রাস বলেন, ‘অর্থ লোপাটে বাংলাদেশের অনুরোধের পাশাপাশি আমাদের বিদ্যমান আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা জানার জন্যও দরকার।’

রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিপাইন ব্যাংকে কিভাবে এসেছে এবং কারা এ সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করছে দেশটির সিনেট কমিটি। এ কমিটির অন্যতম সদস্য সার্জি ওসমেনা স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অর্থ লোপাটের এ ঘটনায় চীনা নাগরিক উইক্যাং ঝু মূলত একজন জুয়াড়ি।

লোপাটের এ অর্থের একটি অংশ যায় ফিলিপিইনের সোলারি ক্যাসিনোতে। ওই ক্যাসিনোর কর্মকর্তারাও চীনা এ নাগরিককে সিনেট কমিটির শুনানিতে জুয়াড়ি হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। সিনেট কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, ‘চীনা এ নাগরিকের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।’

দু’সপ্তাহ আগে অর্থ লোপাট নিয়ে সিনেট কমিটিতে শুনানি শুরু হয়। ওই শুনানিতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন যে, রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখা ম্যানেজার মাইয়া সানতোস দেগুইতোর নির্দেশে নগদ ৬’শ মিলিয়ন পেসো উইক্যাং ঝু’র কাছে হস্তান্তর করেন। সিনেটর ওসমেনা আরো বলেন, গত ১৫ মার্চ কমিটির দ্বিতীয় দফা শুনানিতে ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, চীনা এ ব্যবসায়ীর কাছে ৫ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় আরও ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হস্তান্তর করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোপাট করে দুর্বৃত্তরা। লোপাটের ওই অর্থের ৮১ মিলিয়ন যায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার আগে থেকে খোলা চার অ্যাকাউন্টে। ওই দিনই লোপাটের অর্থের অধিকাংশ চীনা বংশোদ্ভুত ফিলিফিনো ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো’র অ্যাকাউন্টে দেয়া হয়। যদিও উইলিয়াম গোর পক্ষে তার আইনজীবী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তার মক্কেল রিজাল ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কিছু জানেন না। এটি সম্ভবত তার সই নকল করে খোলা হয়েছে বলে দাবি তার আইনজীবীর।

লোপাটের বাকী ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকার একটি ব্যাংকে। প্রাপকের নামর বানানে ভুল থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তারা ওই অর্থ আটকে দেন।