কর ফাকি দেওয়া এখন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে! যমুনার কাছে পাওনা ৭০০ কোটি টাকা কর আদায় করবে এনবিআর

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইকোনমিক রিচার্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দেশে কর ফাঁকির বিষয়টা এতো বিস্তৃত যে, এখন তা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন রাজস্ব কর্মকর্তা যদি সৎভাবে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তখনই বলা হয়, বড় বড় কর ফাঁকিবাজদের না ধরে আমাদের ধরছেন কেন? এনবিআরের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আগামী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কর ফাঁকিতে একটা দুর্নীতির বিষয় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বলা হয়, রাজস্ব আদায় যারা করে তারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আমি বরং উল্টো একটা কথা বলবো। আমাদের দেশের কর বিভাগের কর্মকর্তাদের যা সমস্যা হয় সেটা হলো- আমাদের দেশে কর ফাঁকি এতো বিস্তৃত যে কর ফাঁকি দেওয়াটাই একটা নিয়ম।
“একজন রাজস্ব কর্মকর্তা যদি সৎভাবে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তখনই বলা হয়, বড় বড় কর ফাঁকিবাজদের না ধরে আমাদের ধরছেন কেন? এনবিআরের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ।”
কর আদায়ের ক্ষেত্র বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে তাদের জিডিপির ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ কর আদায় হয়। যেখানে আমাদের ১০ থেকে ১২ শতাংশ আদায় হয়।
শধুমাত্র যমুনা গ্রুপের মালিকানাধীন অ্যারোমেটিক কসমেটিক্সের কাছে বকেয়া ভ্যাট ও সুদ বাবদ পাওনা ৭০০ কোটি টাকা কর বকেয়া আছে। তা আদায়ের উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট আদায় সংক্রান্ত মামলার রায়ের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে রোববার এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, অ্যারোমেটিক কসমেটিক্স হালাল সাবানসহ নানা ব্রান্ডের প্রসাধনী সামগ্রীর উপর প্রদেয় ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত থাকায় এই পাওনার সূত্রপাত হয়। ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারের টিম ১ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৮ পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ থেকে ২৮ নভেম্বর ২০০০ পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে কতিপয় পণ্যের মূল্য ঘোষণা না দিয়ে, পণ্যের কম মূল্য দেখিয়ে এবং ভুঁয়া রেয়াত গ্রহণ করায় ভ্যাট ফাঁকির দুটো মামলা করেন।
অ্যারোমেটিক কসমেটিক্স হালাল সাবানসহ নানা ব্রান্ডের প্রসাধনী সামগ্রীর উপর প্রদেয় ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত থাকায় এই পাওনার সূত্রপাত হয়।
ভ্যাট আইনে শোকজ ও শুনানি শেষে ভ্যাট ফাঁকি ও অর্থদণ্ড বাবদ দুই মামলায় ১৭৪.৪৯০ কোটির দাবিনামা জারি করলে প্রতিষ্ঠানটি সময়ক্ষেপণ করে। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি এর বিরুদ্ধে রিট মামলা করলে ভ্যাট আদায় ঝুলে যায়। পরবর্তীতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিট দুটো খারিজ করে দেয়।
এ রায়ের বিপক্ষে যমুনা গ্রুপ ২০০৫ সালে লিভ-টু-আপিল দায়ের করে। দীর্ঘদিন ধরে আপিল পিটিশন দুটি বিচারাধীন থাকায় পাওনা টাকা আদায় করতে পারেনি ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এনবিআর মামলা দুটো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে গত ১৬ মার্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ফুল বেঞ্চ সরকারের পক্ষে রায় দেন।
এনবিআর জানায়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী ভ্যাট পাওনা হওয়ার পর তা জমা না দিলে প্রতিমাসে ২% হারে সুদ দিতে হয়। বছরে ২৪% সুদ হিসেবে ১৭৪ কোটি টাকার উপর মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায়ে এনবিআর আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সক্রিয়। দীর্ঘদিন অ্যারোমেটিক কসমেটিক্সের বিরুদ্ধে দুটো মামলার বিপরীতে প্রায় ১৭৪ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় ঝুলে ছিল। আপিল ডিভিশনের সর্বশেষ শুনানিতে এনবিআরের পক্ষে রায় ঘোষিত হয়েছে। এখন সরকারকে এই পাওনা টাকা দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তিকৃত এই পাওনা টাকা সময়মতো পরিশোধ না করলে ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির বিধান আরোপ করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করা। সরকারের পাওনা আদায় করতে ভ্যাট আইনের ধারা ৫৬তে এসব বিধান প্রয়োগের কথা বলা আছে।
প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত। এর ভ্যাট নিবন্ধন নং ৫১৭১০০০৫৩০। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।