কৃষি

শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু

শেরপুরে ঝিনাইগাতীর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়েছে। ‘গারো হিলস টি কোম্পানি’নামে নব প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রাথমিকভাবে ২৭টি প্রদর্শনী চা বাগান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির এসব চা বাগানের জন্য স্থানীয় ২৭ জন কৃষকের মাঝে ২৭ হাজার উন্নত জাতের ‘টেটলি টি’চারা বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলার গান্ধীগাঁও এলাকার বনরাণী ফরেস্ট রিসোর্টে রোববার বিকেল ৫ টার দিকে ক্ষুদ্রাকৃতির চা বাগানের জন্য চাষীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে চা চারা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা।

গারো হিলস টি কোম্পানির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসাইন ফনিক্স জানান, ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে ২৭ জন ক্ষুদ্র চাষীর মাধ্যমে ২৭টি প্রদর্শনীতে যে চা চাষ কার্যক্রম শুরু হলো, তা গারো পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়বে। আর এর মাধ্যমে পাহাড়ি জনপদে দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উৎপাদিত চা শেরপুর জেলা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সরকার যদি পুরো সহযোগিতা করেন তবে এ পাহাড়ে চা আবাদ করে বিপ্লব ঘটানো যাবে।

উদ্যোক্তা আমজাদ হোসাইন আরও জানান, পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানো হবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে ক্রস ভিজিট করা হয়েছে।

তিনি জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা, নেত্রকোনার দূর্গাপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এবং জামালপুরের বকমীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি জনপদের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগী। বিভিন্ন সময় শেরপুরের পাহাড়ি টিলায় বাংলাদেশ টি বোর্ড চা চাষাবাদের উদ্দেশ্যে মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চা চাষাবাদের উপযোগী হিসেবে ঘোষণা করে। ঝিনাইগাতী উপজেলায় এক হাজার ৮৫৬ একর, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ একর ও শ্রীবরদী উপজেলায় এক হাজার ১৫১ একর জমি রয়েছে যাতে চা চাষ করা সম্ভব।

কিন্ত উদ্যোগের অভাবে অদ্যাবধি তা গড়ে উঠেনি। গারো পাহাড়ের পাদদেশে তাওয়াকোচা, গুরুচরন দুধনই, পানবর, বাকাকুড়া, ছোটগজনী, গান্ধিগাঁও, হালচাটি, গজনী, নওকুচি, রাংটিয়া, ডেফলাই, সন্ধ্যাকুড়া, গোমড়া ও হলদিগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক পতিত জমি রয়েছে। এতে চা চাষ করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রচুর মুনাফা অর্জন সম্ভব। তাই স্থানীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গারো পাহাড় অঞ্চলে চা চাষের সূচনা করা হয়েছে। আশাকরি অচিরেই এর সুফল মিলবে।

গারো হিলস টি কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসাইন ফনিক্সের সভাপতিত্বে চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুল হাসান, শেরপুর চেম্বার সভাপতি মো. মাসুদ মিয়া, জেলা পরিষদ সদস্য মো. আবু তাহের প্রমুখ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিটিআরআইর সাবেক সহকারী অধীক্ষক এম এ খালেক, পঞ্চগড়ের সবুজ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং পার্টনার শাহিরুল ইসলাম চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী লোকজন ও সাংবাদিকরা।

Back to top button