দেশীয় কাগজশিল্প উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ

আমদানি নিরুৎসাহ করে স্থানীয় কাগজশিল্পের সুরক্ষায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ককর রেয়াত সুবিধার পাশাপাশি প্রস্তুতকৃত কাগজ আমদানির ওপর চড়া শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)।
দেশের ১০৬টি কাগজ উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে বাজেটে এই শিল্পের বড় হুমকি বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহার রোধ করার দাবি জানিয়ে বিপিএমএর নেতারা বলেন, বন্ডেড সুবিধার আড়ালে মিথ্য ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি হচ্ছে। প্যাকেজিং পেপারের নামে সাদা কাগজও আমদানি হচ্ছে। বিনা শুল্কে কাগজের মণ্ড আমদানির সুযোগ থাকায় শিল্প-কারখানা নেই এমন কিছু ব্যবসায়ী মণ্ড আমদানি করে উৎপাদকদের কাছে বিক্রি করায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিপিএমএর মহাসচিব ও মাগুরা পেপার মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দিন বলেন, উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই খাতে বছরে ১৫ লাখ টন কাগজ তৈরি হয়। অথচ দেশের চাহিদা ১০ লাখ টন। সে কারণে উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ উৎপাদন করতে পারছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান চাহিদার অতিরিক্ত কাগজ বিদেশে রপ্তানি করে বিদেশি মুদ্রা আয় করছে। বর্তমানে ইউরোপ, চীন ও আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে বাংলাদেশের কাগজ রপ্তানি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিপিএমএর এই নেতা আরো বলেন, দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা বিনা মূল্যে বই পেলেও শিক্ষার অন্যতম উপকরণ এক্সারসাইজ বুক, স্পাইরাল নোট বুক, লেখার খাতায় মূসক আরোপ থাকায় বাড়তি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দেশে উৎপাদিত কাগজের ব্যবহার বাড়াতে কাগজ দিয়ে তৈরি শিক্ষা উপকরণের ওপর থেকে মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের শিল্পের মতো আমদানির ক্ষেত্রেও বেবি ডায়াপারের ওপর ইউনিটভিত্তিক মূসক আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি। বিপিএমইএ নেতারা কাগজশিল্পের ৩০ ধরনের আমদানি কাঁচামালের ওপর আরোপিত ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার ও শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার দাবি জানান।
গতকাল সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিপিএমএ নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন। এই দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশের প্রতিষ্ঠান যদি ভালো করে এবং আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারে আমরা অবশ্যই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেব। তবে একটি বিষয় অবশ্যই দেখতে হবে, আমদানীকৃত পণ্যের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত পণ্য মানের দিক দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক কি না।’
অনুষ্ঠানে কাগজের মান নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানীকৃত কাগজের তুলনায় দেশে এখন অনেক ভালো মানের কাগজ উৎপাদিত হচ্ছে। নিউজপ্রিন্ট কাগজ আমদানিতে শুল্কছাড় থাকায় দীর্ঘদিন ধরে দেশে এই ধরনের কাগজ উৎপাদন থমকে ছিল। এখন বিশ্ববাজারে নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় নিউজপ্রিন্টের কদর বেড়েছে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় অন্য সংগঠনের মধ্য থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সুরক্ষার জন্য ওয়ান টাইম ব্যবহারের কাপ তৈরির কোটেড পেপার আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানালে বসুন্ধরা গ্রুপের ডিএমডি এর বিরোধিতা করে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোটেড পেপার দিয়ে কাপ তৈরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেশেই গড়ে উঠছে। এটা এখন বিকাশের পর্যায়ে রয়েছে। একে এগিয়ে নিতে হলে এর আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্প আরোপ করা প্রয়োজন।’