আন্তর্জাতিক

তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা ভারত

Image result for তেলের মূল্যবৃদ্ধি

তেলের বাজারে চলমান মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জ্বালানির তৃতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ভারত। এ অবস্থায় তেলের দাম ‘স্থিতিশীল ও স্বস্তিজনক’ থাকবে তা নিয়ে সৌদি আরবের কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছে দেশটি। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ভারত সরকার এ কথা জানিয়েছে। খবর সিএনএন।

বিবৃতিতে বলা হয়, তেলের বর্তমান বাজার নিয়ে সৌদি আরবের তেলবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকালে কথা বলেছেন ভারতের জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। আলোচনায় ভারতের পক্ষ থেকে তেলের দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেসঙ্গে বিষয়টি দেশটির ভোক্তা ও অর্থনীতির ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়েও আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

চলতি বছরের এখন পর্যন্ত তেলের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বিগত ১২ মাসের সঙ্গে তুলনা করলে এ বৃদ্ধি ৪০ শতাংশের বেশি। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, যার সূত্র ধরে বাজারে ইরানের তেল সরবরাহ অক্ষুণ্ন থাকা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে তেলের দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ ভেনিজুয়েলায় তেল উত্পাদন হ্রাস।

ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য পরিমাপে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। গত বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার অতিক্রম করে। আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার্স মার্কেটে শুক্রবার দিনের শুরুতেই প্রতি ব্যারেল ক্রুডের দাম দাঁড়ায় ৭১ ডলার ৬০ সেন্ট, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ।

বলা হচ্ছে, মূলত তেলের মজুদ কমে যাওয়ায় এর দাম বাড়ছে। প্রসঙ্গত, তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ বন্ধে উত্পাদন কমানো নিয়ে রাশিয়া ও অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) মধ্যে একটি চুক্তি হয়। গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় ১৮ মাস মেয়াদি চুক্তিটিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে তেল বাজারসংশ্লিষ্টরা। ভারতের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের যুগ্ম সচিব সঞ্জয় সুধীর বলেন, ‘আমরা বলছি না তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ২৫ ডলার থাকতে হবে। তবে ৮০ ডলার যৌক্তিক দামের চেয়ে অনেক বেশি। এটি বাজার নির্ধারিত দাম নয়।’

এদিকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেলমন্ত্রী আল-ফালিহ ভারতের জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তেলের সম্ভাব্য যেকোনো ঘাটতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতে ওপেকের বাকি সদস্য এবং রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছে সৌদি আরব। এছাড়া তেলের বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা কীভাবে সামলে নেয়া যায়, সে বিষয়ে ওপেকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে আলোচনা করছে সৌদি আরব। এছাড়া সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সম্মেলনে অংশ নেয়ার এক ফাঁকে বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করবে দেশটি। তেল উত্তোলন হ্রাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ নিয়ে আগামী জুনে ওপেক সদস্যদের মধ্যে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে।

বহু বছর ধরে ইরানের তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তেল সরবরাহ মাধ্যমে পরিবর্তন এনেছে দেশটি, যার অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং অতিসম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরবের জায়ান্ট তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো ভারতে একটি ‘মেগা রিফাইনারি’ স্থাপনে দেশটির সঙ্গে গত মাসে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি সই করে। কিন্তু অসহনীয় গতিতে তেলের দাম বৃদ্ধিতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে ভারত। কারণ তেলের নিম্নমুখী দরের সহায়তা নিয়েই বিগত কয়েক বছর বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ভারত।

ভারতের সাম্প্রতিকতম অর্থনৈতিক জরিপে বলা হয়েছে, প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০ ডলার বাড়লে  দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ২ থেকে দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পাবে। এছাড়া গত নভেম্বরে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড অয়েল আউটলুক ২০৪০ শীর্ষক প্রতিবেদনে ওপেক জানিয়েছে, বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আগামী দুই দশক ভারতে জ্বালানির চাহিদা সবচেয়ে বাড়বে। তবে তেলের ঊর্ধ্বমুখী দাম এ চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও হুমকি তৈরি করবে।

Back to top button