দেশের সংবাদ

অন্যান্য দেশের তুলনায় ঢাকার সড়ক কতটা নিরাপদ ?

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বাস চাপা পড়ে দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরে ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নেমেছেন। তাদের অবরোধ-আন্দোলনকে ঘিরে সরকারও বেশ বিব্রতকর অবস্থায়।

কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের সড়ক আসলে ঠিক কতটা নিরাপদ? রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার তুলনামূলক দৃষ্টিতে কতটা কম বা বেশি?

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু ২০১৫ সালে যে ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি’ প্রকাশ করেছিল তাতে দেখা যাচ্ছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার আসলে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতেই সবচেয়ে বেশি – আর বাংলাদেশও তার অন্যতম।

তবে জনসংখ্যার সঙ্গে সারা দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনা করলে দেখা যাবে নিম্ন বা মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের চেয়েও শোচনীয় অবস্থা আরও অনেক দেশে।

এর মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল বা আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার নাম।

প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় এই দুটি দেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

এমন কী দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামেও এই হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

ইরানের জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক, কিন্তু পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাংলাদেশের চেয়েও অনেক বেশি।

তবে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে এখানে বাংলাদেশের কোনও তুলনা হতেই পারে না।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে পশ্চিমী দুনিয়ার বেশিরভাগ উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মতো দেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

এখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিন্তু ভারত, চীন বা মেক্সিকোর মতো জনবহুল দেশগুলোর সঙ্গেই তুলনীয়।

এই সব দেশগুলোতে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার যত, বাংলাদেশের পরিসংখ্যানও মোটামুটি তার কাছাকাছি।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পথ দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যে মুশকিল, জাতিসংঘের সংস্থা হু-র সমীক্ষায় সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের’ (পিপিআরসি) একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পথ দুর্ঘটনা নিয়ে বছরকয়েক আগে উঠে এসেছিল কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সে দেশে শহরের রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই কিন্তু ঘটে জাতীয় বা আঞ্চলিক স্তরের হাইওয়ে বা মহাসড়কগুলিতে।

যেমন, ২০১২ সালে বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার চেয়েও বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছিল কুমিল্লা জেলায়।

সেই বছরে সর্বাধিক পথ দুর্ঘটনার ঘটনায় প্রথম পাঁচটি জেলা ছিল যথাক্রমে কুমিল্লা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রাম।

পিপিআরসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, এই জেলাগুলোর ভেতর দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক গেছে বলেই এই জেলাগুলোতে দুর্ঘটনার হার এত বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টেও বলা হচ্ছে, সারা বিশ্ব জুড়ে পথ দুর্ঘটনায় যারা মারা যান তার অর্ধেকই কিন্তু গাড়ির আরোহী নন।

এদের মধ্যে ৪৯ শতাংশই আসলে পায়ে-হাঁটা পথচারী, কিংবা সাইকেল বা মোটরবাইকের আরোহী।

বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সেখানেও পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এই পদাতিক বা বাইক-সাইকেল আরোহীর সংখ্যাই অর্ধেক।

বছরতিনেক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছিল, “নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছু অগ্রগতি করলেও তাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি”।

বিভিন্ন ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ বা ঝুঁকির উপাদানগুলোর মোকাবিলা করে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমাতে বাংলাদেশে একটি সুসংহত আইন প্রণয়নের ওপরও জোর দিয়েছিল জাতিসংঘের ওই সংস্থা।

Back to top button