ভারতে বন্যায় ৭৭৪ জনের প্রানহানী

ভারতে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বন্যা ও বৃষ্টিপাতসংশ্লিষ্ট ঘটনায় সাতটি রাজ্যে অন্তত ৭৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টারের (এনইআরসি) তথ্যানুসারে, চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও বৃষ্টিপাতে কেরালায় ১৮৭ জন, উত্তর প্রদেশে ১৭১, পশ্চিমবঙ্গে ১৭০ ও মহারাষ্ট্রে ১৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গুজরাটে ৫২ জন, আসামে ৪৫ ও নাগাল্যান্ডে আটজনের প্রাণহানি হয়েছে। কেরালা (২২) ও পশ্চিমবঙ্গে (৫) মোট ২৭ জন নিখোঁজ রয়েছে এবং রাজ্যগুলোয় বৃষ্টিসংক্রান্ত দুর্ঘটনায় আরো ২৪৫ জন আহত হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিপাত ও প্লাবনে মহারাষ্ট্রের ২৬টি, আসামের ২৩, পশ্চিবঙ্গের ২২, কেরালার ১৪, উত্তর প্রদেশের ১২, নাগাল্যান্ডের ১১ এবং গুজরাটের ১০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে এনইআরসি। আসামে ১ কোটি সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ বন্যা ও বৃষ্টির শিকার হয়েছে। এছাড়া রাজ্যটির ২৭ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসামে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) মোট ১৫টি দল উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, এনডিআরএফের একেকটি দলে সাধারণত ৪৫ জন সদস্য রয়েছেন।
এর বাইরে উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এনডিআরএফের আটটি করে দল, গুজরাটে সাতটি, কেরালা ও মহারাষ্ট্রে চারটি করে দল এবং নাগাল্যান্ডে একটি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশসহ দেশের ১৬টি রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (এমইটি)।
চলতি মৌসুমে বন্যা ও বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের একটি কেরালা। রোববার পর্যন্ত রাজ্যটিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় ইদুক্কি বাঁধে পানির স্তর ২ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৪ ফুট রেকর্ড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাঁধের পূর্ণ পানি ধারণের স্তর ২ হাজার ৪০৩ ফুট।
রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের আশ্রয় শিবিরগুলোয় কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ রাজ্যটিতে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে। ইদুক্কি, ওয়েয়ানাদ, কান্নুর, ইরনাকুলাম, পালাক্কাদ ও মালাপপুরাম জেলাগুলোর অধিকাংশ স্থানে ভারি থেকে আরো ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা থাকায় জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গণমাধ্যমকে জানান, কেরালায় ১৯২৪ সালের পর সবচেয়ে দুর্যোগময় পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পুরো রাজ্যে ফসল, ঘরবাড়ি, সম্পদ ও পর্যটন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় রাজ্যের এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাত্ক্ষণিকভাবে রাজ্যটিকে ১ কোটি ৪২ লাখ ৯৫ হাজার ডলার (১০০ কোটি রুপি) সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য কেন্দ্র থেকে দ্রুত একটি দল পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সারা রাত ভারি বৃষ্টিপাতের পর গতকাল হিমাচল প্রদেশের অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়তে দেখা গেছে। এতে শত শত যাত্রীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, রাজ্যের সোলান জেলার কান্দাঘাট এলাকায় ভূমিধসে পাঁচজন চাপা পড়েছে। পরে একজনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল উদ্ধার তত্পরতা জারি রেখেছে। আজকেও রাজ্যজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।