আইন-আদালত

টাকা ছাড়া একটা জিডিও হয় না: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় মামলা না নেওয়ায় অভিযোগে দায়ের করা রিটের শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ওসি সাহেবরা সব জায়গায় কোর্ট বসিয়ে দেন। ওসি কী সালিশ করতে বসেছেন? তারা সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন, অথচ টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না।’

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

শ্যামনগর থানায় মামলা না নেওয়ার প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি কেন তিনি মামলা নিলেন না।’

এরপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওসিরা যেখানে সেখানে কোর্ট বসায়, রাতে কোর্ট বসায়। এতো সাহস তারা কোথায় পায়? তারা নিজেরা বিচার বসায় কীভাবে?’

আদালত আরও বলেন, ‘১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হয়। অথচ অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে দিনযাপন করেন, আমরা দেখি। অথচ অনেক পুলিশের আবার দেখি সুন্দর সুন্দর বাড়ি।’

আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল হক কাঞ্চন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। শুনানির শুরুতে তিনি বলেন, ‘মামলা না নেওয়ার ঘটনা আংশিক সত্য।’

এসময় অ্যাডভোকেট শামসুল হক কাঞ্চন জানান, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউসুফ আলীসহ কিছু লোক সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মো. ফজলুর করিমের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় তারা নগদ দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি স্বর্ণের চেন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। যাওয়ার সময় তারা বাড়ির সীমানা প্রাচীরও ভেঙে ফেলে। হামলার সময় শ্যামনগর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। এরপর ফজলুর করিম কালীগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার একজন এএসআই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

এরপর ঘটনাস্থল থেকে ওসিকে ফোন করে বাদী ফজলুর করিমকে কথা বলতে বলেন এএসআই। ওসি তখন ফোনে ফজলুর করিমকে বলেন- ‘ওপর মহলে নালিশ করিস, তোর মামলা হবে না। কোর্টে মামলা কর।’ তবে পরদিন এসআই মরিুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে বলেন, ‘মামলা হবে না। পারলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে মীমাংসা করে নিতে হবে।’

কিন্তু ফজলুর করিম এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে সব ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার শ্যামনগর থানার ওসিকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। এরপরও ওসি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফজলুল করিম। এরপর ১০ মার্চ প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিষয়টি খোঁজ নিতে মৌখিক নির্দেশ দেন আদালত।

পরবর্তীতে মঙ্গলবার পুনরায় (২ এপ্রিল) রিটের শুনানি করতে গিয়ে ঘটনার আংশিক সত্যতা পাওয়ার তথ্য আদালতকে অবহিত করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। এরপর আদালত এই মামলার প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য আগামী রবিবার (৭ এপ্রিল) দিন ধার্য করেন।

Back to top button