জাকাতের অর্থ মামলার কাজে: বিতর্কে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ

ভারতীয় মুসলামনদের একটি সংগঠন জমিয়তে উলেমায় হিন্দ বলছে, জাকাতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের একটা অংশ তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত মুসলমানদের হয়ে মামলা লড়ার জন্য খরচ করছে।
তারা বলছেন, সেইসব অভিযুক্তের জন্যই জাকাতের টাকা খরচ করা হচ্ছে, যারা অর্থের অভাবে হয়তো ভাল উকিল দিতে পারছেন না বা উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারছেন না।
ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০ জন মুসলমান যুবককে জাকাতের অর্থে মামলা লড়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলে দাবী ওই সংগঠনটির।
জমিয়তে উলেমায় হিন্দ বলছে, এমন অনেক মুসলমান যুবক জেলবন্দী রয়েছেন, যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় অভিযুক্ত।
তাদের অনেককে নিম্ন আদালত সাজাও দিয়েছে, কিন্তু উচ্চতর আদালতে দেখা গেছে যে তাদের অনেকেই নির্দোষ।
সংগঠনটির ভাষায়, সন্ত্রাসের মিথ্যা মামলায় যাদের ফাঁসানো হয়েছে, তাদেরই আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, প্রকৃত সন্ত্রাসীদের নয়।
জমিয়তে উলেমায় হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের আইনি সহায়তা দেওয়ার অর্থ যেমন সাধারণ দান থেকে আসছে, তেমনই আসছে জাকাতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ থেকেও।
“আমরা মনে করি এই আইনি সহায়তা করা আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। বহু মুসলমান যুবকের বিরুদ্ধে মিথ্যা সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হচ্ছে আর তাদের দিনের পর দিন জেলে পচতে হচ্ছে। সরকারগুলো কি একবারও ভাবে না এদের কথা, এদের পরিবারগুলোর কথা?” বলছিলেন মি. চৌধুরী।
সংগঠনটি দাবী করছে, তাদের আর্থিক সহায়তায় লড়া মামলায় অনেকে যেমন উচ্চ আদালতে সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়েছেন, তেমনই অনেকের আবার ফাঁসির সাজা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
আর এধরনের প্রতিটি মামলা হাতে নেওয়ার আগে তারা খুব ভাল করে যাচাই বাছাই করেন।
অভিযুক্তের সঙ্গে সত্যিই সন্ত্রাসী যোগ নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তবেই মামলা হাতে নেয় তারা।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, “জমিয়ত এটা খুবই ভাল কাজ করছে। মুসলমান যুবকদের যেভাবে মিথ্যা সন্ত্রাসের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা অনেকেরই নেই। জাকাতের অর্থে হোক বা অন্য কোনওভাবে সংগৃহীত অর্থে, এই সাহায্যটা খুবই জরুরী।”
কিন্তু জাকাতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কী সন্ত্রাসের মতো একটা স্পর্শকাতর অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়?
কলকাতার বিখ্যাত নাখোদা মসজিদের ইমাম মুহম্মদ শফিক বলছিলেন, “জাকাতের অর্থ সেইসব মানুষের জন্য খরচ করতে হবে, যারা আর্থিকভাবে দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নিরপরাধ মুসলমান যুবকদের পুলিশ প্রশাসন চক্রান্ত করে ফাঁসিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসের অভিযোগে। এইসব মামলা লড়তে অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাদের অনেকেরই হয়তো মামলা লড়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই। তাই জাকাতের অর্থ দিয়ে যদি এই ধরণের মানুষকে সাহায্য করা হয় – সেটা ইসলাম স্বীকৃত।”
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছিলাম, ভারতে তো আর্থিকভাবে দুর্বল অভিযুক্তদের জন্য সরকারের তরফে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। তাহলে কেন জমিয়তে উলেমায় হিন্দকে জাকাতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে মামলা লড়তে হচ্ছে?
জবাবে তিনি বলেছেন, “আইনি সাহায্য আছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলে অনেক ক্ষেত্রেই এখানে উকিলদের আন্তরিকতার অভাব থাকে। তবুও বলব, যদি কেউ লিগাল এইডের সাহায্য নিতে চান, নিতেই পারেন, কিন্তু জমিয়ত তার নিজের কাজ করে যাবে – সন্ত্রাসের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যাওয়া মুসলমানদের সাহায্য দেওয়া চলবে।“
ভারতে সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, যেখানে সন্ত্রাসী হামলার পরে কিছু মুসলমান যুবককে অভিযুক্ত বলে হাজির করানো হয়েছে।
অথচ ৫-৭ বা দশ বছর জেলে থাকার পরে আদালতের রায়ে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন।
এরকমও দেখা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী হামলায় কিছু মুসলমান যুবককে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে, সেটা আসলে হিন্দুত্ববাদী কিছু সন্ত্রাসীরই হামলা ছিলো।