জাতীয়

গো-খাদ্যেও বিপাকে ডেইরি খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে কমছে সরবরাহ, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে গরুর খাদ্যের দাম। তার ওপর নেই দুধের দাম। সব মিলিয়ে দেশের ডেইরি খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছোট ছোট খামারিরা এখন গরুকে অর্ধেক খাবারও দিচ্ছেন।
খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের চড়া দামের মধ্যে সরবরাহও কমে চলেছে। অঘোষিত লকডাউনের ফলে গো-খাদ্যবাহী ট্রাক বা অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। গরুর খাদ্যবোঝাই ট্রাক দেখেও আটকে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল না করলে খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ডেইরি খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কথা বলার সময় অনেক খামারি কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রামের খামারিরা জানান, বিভিন্ন শহরে দুধের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা লিটার হলেও তারা দাম পান অর্ধেকেরও কম। দুধ বিক্রি করে কোনো দিন তারা লাভ করতে পারেন না। বছরশেষে গরুর বাছুরটা যে বিক্রি হয় সেটাই মূলত লাভ। এর মধ্যে লকডাউন পরিস্থিতি খামারিদের আরও বিপাকে ফেলেছে। এখন দুধ এলাকাভেদে প্রতি লিটার ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এদিকে সরকারের নজর দেয়া উচিৎ। গো-খাদ্য পরিবহনের যে ট্রাক সেগুলো আসতে পারলে সংকট কিছুটা কমবে।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের ডেইরি খামারি ও দুগ্ধ খামারি আবদুস সামাদ ফকির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, গত কয়েকদিনের চেয়ে অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। বিকেলের দুধটা মিল্ক ভিটা নিচ্ছে। তাও পুরোপুরি নয়। যার উৎপাদন হয় ৫০ লিটার তার কাছ থেকে অর্ধেক নিচ্ছে। এছাড়া রেশনিং করা আছে। সে মোতাবেক তারা খামারিদের কাছ থেকে দুধ নিচ্ছে। কয়েকদিন আগে যেমন ১০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করতে হয়েছে, এখন তা হচ্ছে না। অর্ধেক দাম হলেও পাচ্ছে। তা ছাড়া অনেকেই এলাকার গরিব মানুষকে দুধ খেতে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার খামারে প্রতিদিন ৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। দুধের দাম কম থাকায় এবং বেশি দামে খাদ্য কেনায় প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।

শেরপুর জেলার ডেইরি খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পু বলেন, ডেইরি নিয়ে আমরা এখন মহাবিপদে আছি। একদিকে দুধের দাম কম, অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। সাত দিনে গো- খাদ্যের দাম কেজিতে ৭-৮ টাকা বেড়ে গেছে। গরুর খাবার বোঝাই ট্রাক আনার সময় পুলিশ ট্রাক আটকে দিয়েছে। বস্তাভরা গরুর খাদ্য দেখার পরেও সে ট্রাক পুলিশ ছাড়েনি। পরে অনেক দেন-দরবারের করে ট্রাক ছাড়ানো হয়েছে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আমরা আমাদের খামার কীভাবে টিকিয়ে রাখব?

পাপ্পু বলেন, সর্বোচ্চ চাই না। ন্যূনতম বেঁচে থাকার সুযোগ চাই। সরকারিভাবেই যদি কিছু দুধ বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয়, কিছু মিষ্টির দোকান পর্যায়ক্রমে খোলা রাখা, গো-খাদ্যের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করলে, আমরা বেঁচে থাকতে পারব।

বগুড়ার ছোট খামারি হবিবর রহমান (হবি) বলেন, এক সপ্তাহ আগে যে ভুষির দাম ৩৫ টাকা কেজি ছিল, সেটা এখন ৪২ টাকা হয়েছে। গাভীর জন্য যে ক্যাটল ফিড ৩৩ টাকা কেজি কিনেছি, সেটা এখন ৪০ টাকা হয়েছে। চালের ভাঙা ক্ষুদ ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা, সেই ক্ষুদের দাম হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। এমনিতেই দুধের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে, তার ওপর খাদ্যের দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের মতো খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না।

এ বিষয়ে প্রাডুসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লকডাউন। কেউ কোথাও মুভ করতে পারছে না।

Back to top button