অর্থ-বাণিজ্য

ব্যাংকে ভিড় বাড়ছে, বাড়ছে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছে মানুষ। সামনে ঈদ। খুলেছে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ফলে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে ব্যাপকহারে। লেনদেনের সময় সীমিত হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ভিড়ও হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।

রোববার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছেন তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক খরচ, বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। তাই ব্যাংকে যাচ্ছেন। লেনদেনের সময় কমিয়ে আনার কারণে চাপ বাড়ছে।

মতিঝিলে উত্তরা ব্যাংকের লোকাল ব্রাঞ্চের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কামরুল জানান, বেলা ১১টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ব্যাংকের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ব্যাংকাররা কাজ করছেন কচ্ছপের গতিতে। ভেতর থেকে বলছে লোক কম তাই সময় বেশি লাগছে। কিন্তু আমরা ভোগান্তিতে আছি। টাকা তুলতে এসে দিন পার হচ্ছে।
একই অবস্থা এনসিসি ব্যাংকের বংশাল শাখারও। সেবা পেতে সময় বেশি লাগছে গ্রাহকের- এমন অভিযোগ স্বীকার করে এনসিসি ব্যাংকের বংশাল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আগে ৩০ জন কর্মী কাজ করতেন, এখন ১০ জন। এর মধ্যে মাত্র চারজন কর্মকর্তা। গ্রাহকের উপস্থিতি বেশি থাকায় সেবা দিতে একটু সময় লাগছে। তিনি বলেন, সীমিত আকারে শাখার লেনদেন হয়। সপ্তাহের দুদিন শাখা খোলা থাকছে। গতকাল খোলা হয়েছে আবার ২০ তারিখ খোলা হবে। সামনে ঈদ। প্রয়োজনীয় লেনদেন সারতে গ্রাহক ভিড় করছেন।

এক কর্মকর্তা বলেন, একটি ব্রাঞ্চে সর্বোচ্চ পাঁচজন কর্মকর্তা অফিস করছেন। ছোট ব্রাঞ্চে তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। অনেক ব্যাঞ্চ আবার সপ্তাহে মাত্র একদিন বা দুদিন খোলা। তাই যেসব শাখা খোলা আছে ওই শাখায় সব গ্রাহকের ভিড় হচ্ছে। তিনি বলেন, সীমিতসংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে ঈদের সময় এই সার্ভিস দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রাহকরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। একই সঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তি দেখে খারাপ লাগছে। এই সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।
সূত্র মতে, ঈদকেন্দ্রিক মানুষের ব্যাংক থেকে ব্যাপক অর্থ উত্তোলন এবং আমানত রাখার পরিমাণ বেড়েছে। লকডাউনের মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, যা অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। এতে দেশে বেড়েছে অর্থের প্রবাহ। কিন্তু এই সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাত গ্রাহকদের হতাশ করেছে। পাচ্ছেন না স্বাভাবিক সেবা। অথচ অন্যান্য ঈদের আগে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ব্যাংক খোলা রাখতে হতো। একই সঙ্গে ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হয়। বর্তমানে গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রুটিন কাজ টাকা দেয়া-নেয়ায় ব্যস্ত আছেন ব্যাংকাররা। তাও আবার সীমিতসংখ্যক কর্মচারী এবং অধিকাংশ শাখাই বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বেড়েছে গ্রাহকদের ভোগান্তি।

টিকাটুলী মোড়ের একটি বেসরকারি অফিসের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা জানান, হাটখোলা রোডে অবস্থিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে তার অফিসের কর্মকর্তা -কর্মচারীদের স্যালারি হিসাব। ঈদের সময় বেতন-বোনাস দেবেন কিন্তু তিনি জেনেছেন এই সপ্তাহেই শাখা খোলা হবে না। এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। স্যালারি হিসাব হওয়ায় অন্য ব্যাংকেও যাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঈদের সময় অন্তত শাখাগুলো খোলা রাখা দরকার।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে শুধু বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাই নয়; গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ শাখা কম খোলা থাকায় সবাই নির্দিষ্ট শাখায় ভিড় করছে।

Back to top button