জাতীয়

লকডাউনে চাল নিয়ে চালবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনেও বোরোর বাম্পার ফলনের মধ্যে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে চালকল মালিকরা, যার প্রভাবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম অন্তত দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে সর্বোচ্চ চার টাকা বা ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে শুক্রবার ৫৪ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়।

রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটামুটি মাসখানেকের ব্যবধানে চালকল মালিকরা ৫০ কেজি চালের বস্তার দাম অন্তত ২০০ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। চালের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে মিল মালিকরা বলছেন, সরকার এবার বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের জন্য দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকে ‘ধানের বাজার চড়া’ হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

তবে তাদের এই যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ প্রতিবছরই সরকার ধান সংগ্রহের জন্য দাম বেঁধে দেয়, এটা নতুন কিছু নয়। আর এবার বোরোর যে দাম ধরা হয়েছে, গতবারও তাই ছিল। উপরন্তু চালকল মালিকরা চুক্তিমূল্যে বোরো চাল সরবরাহ করছেন না বলে তিন দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী তাদের প্রতি যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাতে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর জন্য কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে।

চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে মোট ১০ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। গতবারও একই দাম ছিল, তবে সংগ্রহের লক্ষ্য আরও দুই লাখ টন বেশি ছিল। সে হিসেবে বাম্পার ফলন আমলে নিলে ধানের সরবরাহ ঘাটতি বা দাম বাড়ার দৃশ্যত কোনো কারণ নেই।

দেশের অন্যতম বৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ায় অস্থির চালের বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। দাম বাড়ার এই লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। এক বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ৮ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর কয়েক দফায় বেড়েছে চালের দাম। দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। জেলায় ধানের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধি পওয়ায় তার সঙ্গে সমন্বয় করতে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

চাল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমন মৌসুমের আগ পর্যন্ত এমন দাম বৃদ্ধি অব্যহত থাকবে। চলমান পরিস্থিতির কারণে বিদেশ থেকে সহজে চাল আমদানি করা যাবে না এমন কথা চিন্তা করে অনেক অসৎ আড়ৎদাররা ধান ও চাল মজুদ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মিল মালিক, কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র রমজানের মধ্যে সারা দেশে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের দাম ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে ঈদের পরের চিত্র একেবারে ভিন্ন।
মিলাররা জানান, ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরোদমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলার মিলগুলো সচল রয়েছে। এর মাঝে প্রচুর ধান কিনে মজুদ রেখেছেন মিল মালিকরা। ছাঁটাই ও বিপনন কার্যক্রম চলছে জোর গতিতে।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। করোনার কারণে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না এমনটা আঁচ করতে পেরে সুযোগ সন্ধানীরা এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুদ করছে যেন সময় বুঝে বাজারে ছেড়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

মিলাররা জানান, খোলা বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান অনেকটায় থমকে গেছে। সরকারি গোডাউনে কৃষক ও মিলররা ধান ও চাল দিতে পারছে না। মোটা চালের দাম সরকার ৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও তা এখন বাইরে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ টাকা লোকসানে কোনো মিলার চাল দিতে চাইছে না। পাশাপাশি বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় নানা ঝামেলার কারণে কৃষকরা গোডাউনে ধান দিতে চাচ্ছে না। জেলায় এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, ৩৪ হাজার টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। আর ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ধান সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন।

দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, ধানের বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে।

Back to top button