মতামত

আবারও চাঁদ দেখা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছলচাতুরীর অভিযোগ

‘মাজলিসু রুইয়াতে হিলাল’ এর শক্ত ভূমিকায় সঠিক তারিখে মাস গণনা শুরু

এবারও ১৪৪২ হিজরী সনের মুহররম মাসের তথা হিজরী বছরের প্রথম দিনের চাঁদ দেখা নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তবে রাজারবাগ দরবার শরীফের পক্ষ থেকে পরিচালিত ‘আন্তর্জাতিক রুইয়াতে হিলাল মজলিসের’ দৃঢ় ও শক্ত ভূমিকার কারণে দেশবাসী সঠিক তারিখে মাস গণনা শুরু করতে পারলো এবং সঠিক তারিখে পবিত্র আশুরা শরীফ পালন করতে পারবে।

মাজলিসু রুইয়াতে হিলাল-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) তারিখ সন্ধায় চাঁদের অবস্থান ও বয়সের কারণে চাঁদ দেখা যাওয়া খুব স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু মেঘলা আবহাওয়ায় খালি চোখে চাঁদ দেখা সম্ভব হচ্ছিলো না। তবে মুন্সিগঞ্জ জেলায় কিছু সময়ের জন্য মেঘ সরে যায় এবং রুইয়াতে হিলাল মসলিসের সদস্য মুন্সিগঞ্জ সদরের পঞ্চাসার ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের গাউসুল আজম জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মুহম্মদ কবির হুসাইন ও তার ৩ জন মুসল্লী একত্রে চাঁদ দেখতে পান। উল্লেখ্য, শরীয়ত অনুসারে ২ জন ঈমানদার প্রাপ্ত বয়স্ক চাঁদ দেখার স্বাক্ষী দিলেই তা গ্রহণযোগ্য।

মাজলিসু রুইয়াতে হিলাল-এর পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্যে জানানো হয়, তারা চাঁদ দেখেন ৭:০৯ মিনিটে (চাঁদ দেখার স্বাভাবিক সময় ছিলো মাগরিবের আযান থেকে ৭:২০ পর্যন্ত)। চাঁদ দেখেই প্রথমে তারা রুইয়াতে হিলাল মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিসে জানান। এরপর নিয়ম মাফিক ৭:২০ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের ডিসিকে জানান। এরপর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এডি এবং স্থানীয় মেম্বারকে জানান। উল্লেখ্য ইফা’র পক্ষ থেকেও প্রতি মাসে চাঁদ দেখা বিষয়ক মিটিং থেকে কেউ চাঁদ দেখলে এভাবে করেই জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। রুইয়াতে হিলাল মজলিসের সদস্য হাফেজ মুহম্মদ কবির হুসাইন পুরো নিয়ম অনুসরণ করেন। তিনি ফোন করে জানানোর পরও তাকে ইউএনও, এডিসি এবং ধর্মসচিবের পক্ষ থেকেও ফোন দেয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার সাক্ষী গ্রহণ করে চাঁদ দেখার ঘোষণা দিতে গড়িমসি শুরু করে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। এমনকি ইনকিলাব পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, ইফা চাঁদ না দেখার ঘোষণা দিয়েছে।

এরপর রাত ১০:২০ মিনিটে ইফার চাঁদ দেখা বিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে চকবাজারের শাহী মসজিদের খতিবের কথা বলে একজন ফোন দেয়। হাফেজ কবির সাহেবকে বলেন- “আমরা ইফার চাঁদ বিষয়ক মিটিং থেকে আপনাকে ফোন দিয়েছি, এখানে আমরা অনেক আলেম-ওলামা বসে আছি। আপনাকে কসম করতে হবে- “যদি আপনি চাঁদ না দেখে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেন, তবে আপনার বউ তালাক।” এ কথা শুনে হাফেজ কবির সাহেব বলেন, আমি স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব। আমি নিজ চোখে চাঁদ দেখেছি, ৩ জন মুসল্লীসহ। শরীয়তে ২ জন ঈমানদার চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট। আমি আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করি এবং মানুষের ঈমান আকিদ্বার বিষয় নিয়ে আমি কুফরী কাজ করতে পারি না। আমি সত্য কথা বলছি, সুতরাং এমন ওয়াদা করতে আমার কোন সমস্যা নেই। তবে আপনাদেরকেও ওয়াদা করতে হবে, আমি সত্য বলার পরও আপনারা যদি অস্বীকার করেন, তবে আপনাদেরও বউ তালাক হয়ে যাবে।” এ কথা শুনে চকবাজারের শাহী মসজিদের খতিব ফোন রেখে দেয় এবং রাত ১০:৪১ মিনিটে মিডিয়াতে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়।

রুইয়াতে হিলাল মজলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রুইয়াতে হিলাল মজলিসের পক্ষ থেকে প্রতি জেলার প্রতি থানায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা আছে, যারা কুরআন হাদীস ইজমা কিয়াস অনুসারে চলেন, সুন্নত পাবন্দ করেন, হারাম কাজ এড়িয়ে চলেন, প্রতি মাসে চাঁদ সম্পর্কে তাদের আগেই জানিয়ে দেয়া হয়, কোন এলাকায় কত ডিগ্রি কোণে, কত সময়ের মধ্যে চাঁদ দৃশ্যমান হবে। তারা প্রত্যেক এলাকায় লোকজন নিয়ে অধির আগ্রহে চাঁদের জন্য অপেক্ষা করেন। তারা ঈমানী দায়িত্ব পালন করছে মনে করেই চাঁদ দেখেন। অপরদিকে ইসলামীক ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এলাকায় দায়সারাভাবে চাঁদ দেখে। প্রতি জেলায় যে সমস্ত ওয়াচার দিয়ে চাঁদ অবলোকন করায়, তারা অধিকাংশ সময় বেখেয়াল থাকে। অনেক এলাকায় তারা চাঁদ না খুজেই ঘোষণা দেন, চাঁদ দেখি নাই। অনেক এলাকায় হিন্দু ডিসি ও এডিসির দায়িত্ব চাঁদ দেখা, যা শরীয়তে কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া, ইফার নিযুক্ত ওয়াচারদের অধিকাংশেরই চাঁদ দেখার কোনো নিয়ম কিংবা প্রশিক্ষন নেই।

উল্লেখ্য, ১৪৪০ হিজরী সনের শাবান মাসের চাঁদ দেখা নিয়েও মিথ্যা আরোপ করেছিলো ইফা। ফলে পুরো দেশের মানুষের পবিত্র শবে বরাত নষ্ট হয়। এ বিষয়ে রুইয়াতে হিলাল মজলিসের পক্ষ থেকে একাধিক স্বাক্ষী পেশ করা হলেও তারা সেটা অগ্রাহ্য করে। এরপর ১৪৪০ হিজরী সনের ঈদুল ফিতরের চাঁদ নিয়েও একই কা- ঘটায়। সে সময়ও বহু সাক্ষী দলিল পেশ করে জাতিকে সঠিকটা জানায় রাজারবাগ শরীফ উনার রুইয়াতে হিলাল মজলিস, কিন্তু তারপরও সেটা অগ্রাহ্য করে ঈদের চাঁদ না দেখার ঘোষণা দেয় ইফা।

মুফতি মুহম্মদ ইমতিয়াজ খাইয়াম

সদস্য-‘আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতে হিলাল’

Back to top button