মতামত

নতুন সাইনো-রাশিয়ান সাবমেরিনের সম্ভাব্য ক্রেতা হতে পারে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন নৌবাহিনী এখন আর নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পরিচালনা করে না। তবে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন থাকার পরও নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পরিচালনা করে চীন ও রাশিয়া। এগুলো সস্তা এবং পারমাণবিক সাবমেরিনের চেয়ে কিছুটা সুবিধাও আছে, বিশেষ করে উপকূলের কাছাকাছি থাকার জন্য। এসব সাবমেরিন অন্য দেশে সহজে রফতানি করা যায়। চীন ও রাশিয়া নতুন প্রজন্মের অপারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির কাজে হাত মিলিয়েছে। তবে এই সাবমেরিন কেমন হবে তা এখনো রহস্যময়।

রাশিয়ার বার্তা সংস্থা রিয়া নোভস্তি জানায়, রাশিয়া ও চীন একটি নতুন সাবমেরিন ডিজাইনে সহযোগিতা করছে। এই প্রকল্প সমন্বয় করছে রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি টেকনিক্যার কোঅপারেশন।

সাবমেরিন তৈরির ঐতিহ্য আছে রাশিয়ার। তারা অনেক বড় বড় বিশ্বসেরা সাবমেরিন তৈরি করেছে। তাই তাদের প্রযুক্তি চীনাদের থেকে এগিয়ে থাকা নিয়ে সন্দেহ নেই। সাবমেরিন তৈরিতেও চীনকে সাহায্য করেছে রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের সময় গল্ফ-ক্লাস ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন ও রোমিও-ক্লাস অ্যাটাক সাবমেরিনের পরিকল্পনাও তাদের দেয়া। রাশিয়া অতি সম্প্রতি চীনকে কিলো-ক্লাস ডিজেল-ইলেকট্রিক অ্যাটক সাবমেরিন সরবরাহ করে।
তবে চীন নিজের পথে অগ্রসর হয় এবং দেশীয়ভাবে যেকোন ধরনের সাবমেরিন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া স্পষ্টভাবেই এগিয়ে আছে। তবে নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরির ক্ষেত্রে রাশিয়া কতটা এগিয়ে আছে তা পরিষ্কার নয়। এ ক্ষেত্রে চীনের সামর্থ্য খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

চীনাদের এগিয়ে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো প্রপালশন। চীন এআইপি (এয়ার ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার) সামমেরিন তৈরি করলেও রাশিয়া এখনো এই প্রযুক্তি পুরোপুরি হাসিল করতে পারেনি। রাশিয়ার লাডা-ক্লাস বোটে এআইপি প্রযুক্তি যুক্ত করা হতে পারে বলে ধারণা করা হয় কিন্তু এখনো তা করা হয়নি। অবশ্য রাশিয়ার সাবমেরিন ডিজাইনিংয়ের সক্ষমতা বিবেচনা করে মনে হয় তাদের সমস্যা যতটা না প্রকৌশলগত তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগের।

চীনাদের এগিয়ে থাকার আরেকটি ক্ষেত্র হলো অ্যাডভান্সড ব্যাটারি। সাবমেরিন সবেমাত্র লিথিয়াম-ব্যাটারিতে স্থানান্তর হচ্ছে। বিশ্বের প্রথম লি-আয়ন ব্যাটারির সাব তৈরি করে জাপানিরা। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া ও ইটালি। চীনও এই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়েছে বলে শোনা যায়। এই ক্ষেত্রটিতেও চীনারা রাশিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকতে পারে।

তবে দুই দেশের প্রযুক্তি একত্রিত হলে তার ক্ষমতা হবে অবিশ্বাস্য। যেমন চীনের সাবমেরিনে যদি রাশিয়ার সোনার বা অস্ত্র ব্যবহার করা হয় অথবা রাশিয়ার সাবমেরিনে চীনা ব্যাটারি ও এআইপি প্রযুক্তি যুক্ত করা হলে।

এদিকে রাশিয়ার বিখ্যাত সাবমেরিন ডিজাইন ব্যুরো ‘ম্যালাচাইট’ নিজস্ব সাবমেরিন ডিজাইন করছে। তাদের পি-৭৫০বি ‘সেরবাল’ হলো ২১৪ ফুট দীর্ঘ সাব যাতে গ্যাস টারবাইন চালিত এআইপি ব্যবহার করা হবে। এই টারবাইট চলবে তরল অক্সিজেন দিয়ে। সম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার অস্ত্র প্রদর্শনীগুলোতে এই ডিজাইন বেশ দৃষ্টি কাড়ে। চীনের জাহাজ নির্মাতারাও নিজস্ব ডিজাইন হাজির করছে। তবে দুই দেশের ভবিষ্যৎ নৌবাহিনীর যৌথ সাবমেরিনের প্রয়োজনটি কোথায় গিয়ে মিলিত হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

মনে হয় নতুন সাবমেরিন চীন বা রাশিয়ার নৌবাহিনীর কেউই ব্যবহার করবে না। এটা তৈরি করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য, বিশেষ করে প্রচলিত ধরনের অ্যাটাক সাবমেরিনের ক্ষেত্রে। যৌথ সাবমেরিন তৈরিতে বাণিজ্যিক বিবেচনা থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানে প্রচলিত সাবমেরিন বিক্রি করেছে চীন। এই বাজারে এরই মধ্যে বড় অংশ দখল করেছে তারা। এসব দেশে ভবিষ্যতে নতুন সাবমেরিন রফতানি করা হতে পারে।

রাশিয়া তার বিদ্যমান নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের বহরও সম্প্রসারণ করছে। সম্প্রতি তারা আরেকটি লাদা-ক্লাস সাবমেরিনের অর্ডার দিয়েছে।
ফলে চীন-রাশিয়া যৌথ নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিন প্রকল্পটি জবাবের চেয়ে বেশি প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার মিডিয়ায় এ সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। আর সাবমেরিন যুদ্ধের ক্ষেত্রে নতুন সাবমেরিন সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়াও একটি অপেক্ষার খেলা।

Back to top button