রাজনীতি

সীমান্ত হত্যায় সরকার নিশ্চুপ : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সীমান্তে মানুষ হত্যায় সরকার ‘নিশ্চুপ’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ তোলেন।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এত করুণ, দেশের সার্বভৌমত্ব এত দুর্বল যে প্রায় দুইদিন-তিনদিন পর বর্ডারে মানুষকে মারছে, মানুষ হত্যা করছে, দেশের মানুষ রক্তাক্ত হচ্ছে। আজ পর্যন্ত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী)। এত নতজানু সরকার যে একটা প্রতিবাদও করতে পারছেন না এটার জন্য।’

রোববার সকালে বিজিবি সদরদফতর পিলখানায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে বলে বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

রিজভী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বর্ডারে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সুনামগঞ্জের বর্ডারে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে, লারমনিরহাটের বর্ডারে একজন গুলিবিদ্ধ হচ্ছে না হলে মেরে ফেলা হচ্ছে।’

‘আপনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকলে সীমান্তে মানুষ মারা যায় কিনা? অর্থাৎ এই কথাটার মধ্যে আপনাদের যে আনুগত্য কত হেয় টাইপের এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট।’

বিএনপি সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির নীতি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ, দূরবর্তী দেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু নিজের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে নয়। শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নিজের দেশের স্বার্থকেও বিসর্জন দিচ্ছেন। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।’

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘এই ক্যাসিনোকাণ্ড, এই সমস্ত ভয়ংকর যারা লুটপাট করেছে সরকারি টাকা, সেই সরকারি টাকা লুটপাটকারীদের আমরা দেখেছি। কিন্তু এদের কাছ থেকে বখরা পেয়েছে সেই সমস্ত নেতা, সেই সমস্ত গডফাদারকে তো স্পর্শও করতে পারেনি দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

‘এই যে জি কে শামীমের কথা বলা হয়- ছয় হাজার কোটি টাকার সে কাজ নিয়েছে। পিডব্লিউডির ঠিকাদারিতে সে কাউকে কাজ নিতে দিত না। সেই জি কে শামীমের জামিন হয়ে যায় গোপনে। কী ভয়ংকর অবস্থা চিন্তা করে দেখুন। যে ব্যক্তিটি রূপপুর প্রকল্পে সাত হাজার টাকা দিয়ে বালিশ কিনেছে এবং সাড়ে ৩৭ আখ টাকা দিয়ে পর্দা কিনেছে। সেই প্রকল্পের আবাসিক ভবনগুলো অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য ১৬৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার যে ঠিকাদার শাহাদাত সে কিন্তু জামিন পেয়ে গেছে। তাহলে বলুন আমরা কোন শাসনের অধীনে আছি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের একদিকে জামিন বাতিল করে কারাগারে নিচ্ছে। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জামিন পাচ্ছে। এক দেশে আইনের দুই রকম প্রয়োগ হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়কে যখন এক মামলায় জজ সাহেব খালাস করে দিলেন সেই বিচারককে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’

‘আইন, বিচার, প্রশাসন, আইনি প্রক্রিয়া- সবকিছু সরকার প্রধানের নির্দেশে হয়, সবকিছু তার কথায় হয়। অর্থাৎ সে যাকে পছন্দ করে না তাকে জেলে যেতে হবে, তাকে মামলায় পড়তে হবে, সে নিরুদ্দেশ হবে, সে গুম হবে। আর যে তার প্রিয় লোকজন তার শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি হোক, পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ড হোক- তাদের সাতখুন মাফ, সবকিছু মাফ। আজ লুটেরা লীগে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এটা বাস্তবতা। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে তার প্রমাণ দেখবেন।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মরণে মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রদানে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানটি বাড্ডার একটি মাদরাসায় হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের বাধার কারণে এটি নয়া পল্টনের কার্যালয়ে হয়।

Back to top button