জাতীয়

সিনহা হত্যাকাণ্ড: ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তাকে ফোন ওসি প্রদীপের

নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর চট্টগ্রামে ভারতীয় হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তাকে ফোন করেছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।

সিনহা হত্যার তদন্তে গঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি প্রদীপের কাছে জানতে চেয়েছিল, তিনি কেন ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছিল? জবাবে প্রদীপ বলেছে, হাই–হ্যালো করা। প্রায়ই তাঁকে সেই কর্মকর্তা ফোন দেন। তাই সেদিন সেও ফোন দিয়েছিল। কমিটি জানতে চেয়েছিল– তাঁকে কী বলেছিল? প্রদীপ বলেছে, বলেছিলাম খুব বিপদে আছি। কমিটির অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রদীপ কমিটিকে বলেছে, ‘এসপি সাহেব আমাকে বলেছিল আমার জীবন হুমকির মুখে। আমি সেটা তাঁকে বলেছিলাম।’

এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রদীপ কুমার দাশ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছিলেন ৩ আগস্ট বিকাল পাঁচটা ১৮ মিনিটে। ওই ফোনালাপের পরদিন তিনটি বিদেশি অনলাইনে সিনহাকে নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সিনহা এসএসএফে চাকরির সময় নানা অপকর্মে যুক্ত ছিল।

সিনহা হত্যা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে মন্ত্রী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, প্রতিবেদন অনুসারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সরকারি অস্ত্র তেমন ব্যবহার করতেন না টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে নিজের অস্ত্র ব্যবহার করত।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটি প্রদীপকে জেরা করেছে। কমিটির সদস্যরা জানতে চেয়েছিল, আপনার সময়কালে টেকনাফে ১০৬টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ১৭৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এগুলোতে কি আপনি সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? প্রদীপ বলেছে, বেশির ভাগই তাঁর নেতৃত্বে হয়েছে। কমিটি জানতে চেয়েছিল, আপনি কতবার নিজে গুলি করেছেন, কী অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছেন? জবাবে প্রদীপ বলেছেন, সে ২০-৩০ বার গুলি করেছে, ব্যক্তিগত অস্ত্র দিয়ে।

প্রদীপ তদন্ত কমিটিকে বলেছে, ‘আমার সাড়ে সাত লাখ টাকা দামের একটি ওয়াল্টার পিস্তল আছে। আমার কাছে যেটা আরামদায়ক মনে হয়, আমি সেটা ব্যবহার করি। তা ছাড়া সরকারি কাজে ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহার করা যায়।’

ব্যক্তিগত অস্ত্রের গুলির হিসাব কীভাবে রাখতেন? কমিটির এ প্রশ্নের জবাবে প্রদীপ বলেন, জিডি করে নিজের পিস্তলের গুলির হিসাব রাখত।

কমিটি তাঁর কাছে জানতে চায়, আপনার নামে বরাদ্দ করা সরকারি অস্ত্র থেকে গত দেড় বছরে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। এর কারণ কী? প্রদীপের জবাব, সরকারি পিস্তল ‘তরাস’ সে দু’একবার ব্যবহার করেছে। এই পিস্তল দিয়ে পাঁচটির মতো গুলি ছুড়েছে।

প্রদীপের কাছে কমিটি জানতে চায়, আপনি কি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, নাকি অধীনস্থদের পেছনে থাকেন? জবাবে প্রদীপ বলেন, ‘আমি সামনে থেকেই পরিচালনা করি।’

অভিযোগ আছে, আপনার সঙ্গে মেরিন ড্রাইভে ‘এনকাউন্টার’ বেশি হয়। এর কারণ কী? প্রদীপ বলেন, মেরিন ড্রাইভে শুধু পুলিশ নয়, র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গেও হয়।

সামরিক বাহিনীর দুই কর্মকর্তাকে ‘স্যার’ বলতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন, এটা কি সত্যি? প্রদীপ বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আপনাকে স্যার বলতে হবে সেটা কোথায় লেখা আছে? এটা বলা ঠিক ছিল না। এ জন্য আমি অনুতপ্ত।’

পরিদর্শক লিয়াকত আপনার বিচারে কেমন পুলিশ অফিসার? ওসি প্রদীপ বলেছে, ‘মধ্যমানের অফিসার। লিয়াকত ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খায়। সে আমাকে না জানিয়ে এসপিকে ফোন দেয়।’

গত ৩১ জুলাই কক্সবাজারের শামলাপুর চেকপোস্টে পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এ ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। সব মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। এ পর্যন্ত ১০ পুলিশ ও তিন গ্রামবাসীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।:

Back to top button