মতামত

জোরদার হচ্ছে তুরস্ক ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, পাকিস্তানের সামিরক নির্ভরতা পুরোপুরি ছিল পাশ্চাত্য বিশ্বের ওপর। অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তান বুঝতে পারে যে পাশ্চাত্য দুনিয়ার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের কাছে এফ-১৬ বিক্রি বাতিল করার জন্য প্রেসলার অ্যামেন্ডমেন্টের অধীনে এফ-১৬ চুক্তির ওপর মার্কিন অবরোধের সময় বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ওই অবরোধ আবার পাকিস্তানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দেশটি বুঝতে পারে যে সামরিক উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে, বিশেষ করে দুর্বল অর্থনীতি ও প্রতিটি ফ্রন্টে শত্রু থাকায়।

ছয় বছরের ব্যবধান ও সাশ্রয়ী জঙ্গিবিমান ক্রয়ের চেষ্টায় পাকিস্তান দেশীয় জঙ্গিবিমানের ডিজাইনের জন্য চীনে যায়। এর ফলে চতুর্থ প্রজন্মের জেএফ-১৭ জঙ্গিবিমানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১০ বছর পর এখন পাকিস্তান চীন থেকে কিছু ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এনে নিজেরাই পুরোপুরিভাবে জেএফ-১৭ নির্মাণ করতে পারে। জেএফ-১৭ দিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কী হবে?

নৌবাহিনীর ফ্রিগেট, আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, ও ড্রোনের জন্য চীনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল পাকিস্তান। কিন্তু চীন নিজে রুশ প্রযুক্তিতে নৌবাহিনীর বিকাশ ঘটাচ্ছে। তা ব্যয়বহুল এবং দেশীয় নয় পুরোপুরি। ২০১৮ সালে পাকিস্তান ১৭ হাজার টনের ফ্লিট ট্যাঙ্কার ক্রয়াদেশ দেয় তুরস্ককে। এটি তুর্কি একটি প্রতিরক্ষা কোম্পানির মাধ্যমে করাচি শিপিয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে।

এটি সম্পন্ন হওয়ার পর পাকিস্তান চারটি অপেক্ষাকৃত কম ফিচারের ছোট ফ্রিগেট কোরভেটের ক্রয়াদেশ দেয়। তুরস্কের সাথে এ নিয়ে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হয়। ওই সময়ের তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নুরেত্তিন কানকলির মতে, ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তিটি তুর্কি সামরিক ইতিহাসে বৃহত্তম। দুটি এডিএ ক্লাস কোরভেট নির্মিত হবে তুরস্কে, আর বাকি দুটি তৈরি করা হবে প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী করচি শিপিয়ার্ডে।

পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে দেয়ার পরও দেশটি আবার মার্কিনিদের কাছে গিয়েছিল অ্যাপাচি হেলিকপ্টার কেনার জন্য। এবারও যুক্তরাষ্ট্র এসব হেলিকপ্টার বিক্রি করতে অস্বীকার করে। ফলে পাকিস্তানকে পুরনো এএইচ-১ কোবরা হেলিকপ্টার পরিবর্তনের জন্য বিকল্প চিন্তা করতে হয়েছে। অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার জন্য পাকিস্তান দুটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার বাছাই করে: চীনা জেড-১০ ও তুর্কি-১২৯ এটিএকে।

বালুচিস্তানের উত্তপ্ত মরুভূমি থেকে উত্তরের শীতলতম স্থানে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ব্যবহারের কয়েক মাসের প্রবল প্রয়াসের পর পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্কের টি-১২৯ এটিএকে হেলিকপ্টার কেনার। কারণ এর ইঞ্জিন অনেক বেশি শক্তিশালী। আর তা যুক্তরাষ্ট্রের নক্সায় তৈরী। ২০১৮ সালের ২৫ মে পাকিস্তান ৩০টি টি-১২৯ এটিএকে হেলিকপ্টারের ক্রয়াদেশ দেয়। তবে এসব হেলিকপ্টারের ইঞ্জিনের রফতানির লাইসেন্স দিতে যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকৃতি জানানোর কারণে দুই বছর পরও এগুলোর উৎপাদন শুরু হয়নি।

কেবল এটিই নয়, পাকিস্তানের সাথে এফ-১৬ চুক্তি করতেও অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পাকিস্তানকে পুরনো ব্লক ১০/১৫ এফ-১৬এ/বি আধুনিকায়নের জন্য তুরস্কের দ্বারস্থ হয়। এর আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬কে সর্বশেষ এফ-১৬ মানের আধুনিকায়ন করে দেয় তুরস্ক। এছাড়া পাকিস্তানের তিনটি সাবমেরিনও হালনাগাদ করে দিচ্ছে তুরস্ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। কারণ পাকিস্তান সামিরক ড্রোন, রাইফেল ও জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের ক্রয়াদেশ দিতে পারে।

Back to top button