জাতীয়

সড়কের নাম ‘রোগী বানানোর সড়ক’

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি হয় চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক দিয়ে। রাস্তাটি জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়ক। ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষের যাতায়াত এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু ৩ বছর যাবৎ চরম দুর্ভোগে আছেন এই এলাকার মানুষ।

দুর্ভোগ কমাতে মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কটি উন্নয়নে ৪২ কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছর কাজ শুরু হয় যার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে সড়কটির। যা এই এলাকার দেড় লাখ মানুষের জন্য চরম হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এতে ব্যহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি। সেইসঙ্গে হুমকিতে পড়েছে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র। এই রাস্তটিতে বড় বড় গর্তের কারণে বিকল্প সড়ক হিসেবে ট্রাক-লরি শ্রীমঙ্গল হয়ে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে কমলগঞ্জ হয়ে চাতলাপুর চেকপোস্টে যাচ্ছে যা বনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

জানা যায়, মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর সড়কের ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য ৪২ কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত ৬ মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র্যাব-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড কাজ করেছে মাত্র ২০ শতাংশ। এরপর দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখায় পুরো রাস্তাই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।

চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ না হাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। তবে করোনা শুরুর আগে দফায় দফায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিলেও তারা তখন তা আমলে নেয়নি বরং নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষের প্রতিশ্রুতি দেয়।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন অংশে কাজ হবে। এর মধ্যে সড়কে যেসব বাজার রয়েছে, সেসব স্থানে কাজ হবে না। বাজার এলাকায় পরবর্তীতে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ হবে। অন্যদিকে যেসব স্থান বন্যায় তলিয়ে যায় সেসব স্থানেও কাজ হচ্ছে না। সেসব স্থান উঁচু করে পুনর্নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

চাতলাপুর এলাকার পল্লী চিকিৎসক আব্দল মুহিত জানান, অসুস্থ রোগীদের আমরা জেলা সদরে রেফার করি। ভাঙা সড়কে বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী নারীদের যে অমানবিক কষ্ট হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ কল্পনা করতে পারবে না।

সিএনজি অটোরিকশা চালক বিল্লাল মিয়া বলেন, এই সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে এখন গাড়ির নাম হয়েছে ‘ভাঙ গাড়ি’। আর যাত্রীরা দুর্ভোগের কারণে নাম দিয়েছেন ‘রোগী বানানোর সড়ক’। আমাদের গাড়ি বিকল ও যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করছি।

এদিকে এই রাস্তা চলাচল উপযোগী না হওয়ায বড় বড় লরি এবং ট্রাক বিকল্প সড়ক হিসেবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে শ্রীমঙ্গল হয়ে কমলগঞ্জ চাতলাপুর শমসেরনগর যাচ্ছে যা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

সড়কটি পরিদর্শন করে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কাজের গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন জানান, সড়কের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। করোনা ও বর্ষা মৌসুম দেখিয়ে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বাকি ১৩ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ পক্রিয়াধীন রয়েছে জানান এই কর্মকর্তা।

Back to top button