কৃষি

এসেছে অনেক নতুন জাতের ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলছেন যে এ ধরণের অন্তত ১০ হাজার জাতের দেশীয় ধান এখন আর পাওয়া যায় না। তিনি জানান, এখন বাংলাদেশের পাহাড় থেকে সমতল অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো ধানের সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতের আবাদ হয়।

ড. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এ কারণে খাদ্য চাহিদাও বাড়ছে। তাই ধানের উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে।

অথচ দেশীয় জাতের ধানের ফলন কম। এ কারণেই আমরা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছি। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে আবহাওয়া, প্রাকৃতিক অবস্থা ইত্যাদিতে অল্প সময়ে বেশি ফলন দেয় এমন জাতের, বলছিলেন তিনি।

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, এখন বাংলাদেশে হাইব্রিড ও উফশীসহ আরো অনেক ধরণের আধুনিক জাতের ধান চাষ হচ্ছে।

ধানের জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়, সেগুলো হলো :
১. ফলন বাড়াতে হবে – আগের জাতের চেয়ে ফলন বেশি হতে হবে
২. সময় কম লাগতে হবে অর্থাৎ কম সময়ে বেশি ফলন পেতে হবে
৩. স্ট্রেস অর্থাৎ খরা, বন্যা, লবনাক্ততা, উষ্ণতা, তাপ সহ্য করা ছাড়াও রোগবালাই এবং পোকামাকড় মোকাবেলা করে যেগুলো ভালো ফলন দেবে
৪. কোয়ালিটি হতে হবে – প্রিমিয়াম কোয়ালিটি
ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক জানান, ধানের কোনো একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করার আগে বিষদ গবেষণা করা হয়। আর এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয় এই বিষয়গুলোর ওপর – কোন এলাকার জন্য এটি করা হচ্ছে, সেই এলাকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস কী, বাজার পরিস্থিতি কেমন, কৃষকদের বৈশিষ্ট্য কী ইত্যাদি।
তিনি অবশ্য বলেন, নাটোর, যশোর, রাজশাহীসহ কিছু এলাকায় অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে দেশীয় জাতের ধান সংরক্ষণ করছেন, এবং বীজ অন্যদেরও দিচ্ছেন এগুলো প্রসারের জন্য।
যেমন আমন সিজনে ব্রি ধান ৮৭, যেটি রোপা আমন হিসেবে পরিচিত। এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে এখন। এই ধান থেকে পাওয়া যায় সাদা রংয়ের লম্বা ও চিকন আকৃতির চাল।
ড. শাহজাহান কবীর বলেন, এটিই এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাত এবং রোপণের পর গড়ে ১২৭ দিনের মতো সময় লাগে ধান কাটার পর্যায়ে যেতে।
এছাড়া খরা সহিষ্ণু রোপা আমন (ব্রি ৭১), যার চাল হয় লম্বা ও মোটা সাদা রংয়ের; উচ্চ ফলনশীল রোপ আমন (ব্রি ৭৫), যার চাল হয় মাঝারি মোটা ও সাদা রংয়ের এবং অলবণাক্ত জোয়ার ভাটা সহিষ্ণু রোপা আমন (ব্রি ৭৬) জাতের ধানও বেশ জনপ্রিয়।
আবার বোরো মওসুমে এক সময় কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলো উচ্চ ফলনশীল বোরো (ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯), যার চাল মাঝারি চিকন ও সাদা।
কিন্তু এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্রি ৯৬ হিসেবে পরিচিত উচ্চ ফলনশীল বোরো, যার চাল মাঝারি ধরণের খাটো ও সোনালী রংয়ের।
মিস্টার কবীর বলেন, আগের জাতের চেয়ে নতুন এই জাতটির ফলন হয় একই সময়ে দেড় থেকে দুই টন বেশি হয়।
আর আউশ জাতের ধানের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল আউশ (ব্রি ৪৮) বেশি আবাদ হচ্ছে, যার চাল মাঝারি মোটা আর ভাত হয় ঝরঝরে।
ধান গবেষকরা বলছেন, এমন কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো জিঙ্ক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। আবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও ধানের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, তাদের জন্য সহায়ক চাল পাওয়া যাবে এমন ধানও এসে গেছে কৃষকের কাছে।
যেমন জিঙ্ক সমৃদ্ধ বোরো (ব্রি ধান ৮৪) ধান থেকে পাওয়া চালের পেরিকার্পের রঙ লালচে ও চালের আকার মাঝারি চিকন আর রং সাদা।
ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, এ জাতের ধানে উচ্চ মাত্রায় জিঙ্ক এবং মধ্যম মাত্রায় আয়রন ও প্রোটিন আছে।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত পাঁচটি জিঙ্ক-সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এর বাইরে বোরো, আমন ও আউশের কয়েকটি হাইব্রিড জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলোর কোনোটার চাল সরু আবার কোনোটা মাঝারি-চিকন কিংবা কোনাটা মোটা আকারের।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত ১০২টি (৯৫ টি ইনব্রিড ও ৭টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে :
৪৩টি জাত বোরো মওসুমের জন্য (বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী)
২৫টি জাত বোনা এবং রোপা আউশ মওসুম উপযোগী
৪৫টি জাত রোপা আমন মওসুম উপযোগী
১২টি জাত বোরো ও আউশ – উভয় মওসুম উপযোগী
১টি জাত বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মওসুম উপযোগী
এবং ১টি জাত বোনা আমন মওসুম উপযোগী।

Back to top button