জাতীয়

সীমান্ত হত্যা: কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলে থাকার ১০ বছর

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: বিশ্ব আলোচিত ভারত সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার আজ ১০ বছর। ২০১১ সালের আজকের এই দিনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী এলাকার কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃতদেহ। এতে গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।

পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’-এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছে স্বজনার।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। সকাল পৌনে ৭টা থেকে নিথর দেহটি কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।

বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন নূর ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা সংগঠন ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। পরবর্তীতে আরও কয়েকদফা শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি।

কিশোরী ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকের কাছে গিয়েছি কিন্তু ১০ বছরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।’

কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ফেলানী হত্যার রিটটি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে শুনানির জন্য কার্যতালিকার তিন নম্বর পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে কোভিট-১৯ এর জন্য বিলম্ব হচ্ছে। তবে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করেন এই আইনজীবী।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নূর ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হন দেশের উদ্দেশে। বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল ফেলানী। মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে ফেলানী মারা যায়। এরপর তার দেহ অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে।

Back to top button