রাজনীতি

আ.লীগের স্থানীয় কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি

হিন্দুদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর, নাসিরনগরে ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে ডাকা মানববন্ধন কর্মসূচিতে, হিন্দুদের অংশ নিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ছায়েদুল হকের অনুসারীরা বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

5.,

নাসিরনগর সদরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নাসিরনগরের অনেক হিন্দু মানববন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা। মানববন্ধনে অনুপস্থিত ছিলেন- ছায়েদুল হকপন্থী হিন্দু নেতারা ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। সরেজমিনে দেখা যায়, মানববন্ধনে ছাতা মাথায় নিয়ে অংশ নেন দেড় শতাধিক মানুষ। যদিও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আশানুরূপ নয় বলে জানান আয়োজকরা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।

মানববন্ধনের আয়োজক বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেছে, মন্ত্রী ছায়েদুল হকের লোকজন দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হিন্দুদের মানববন্ধনে আসতে বাধা দিয়েছেন। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, ছায়েদুল হক হিন্দুদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তুলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করেছেন। তার হস্তক্ষেপে নাসিরনগরের অনেক হিন্দু মানববন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি তার লোকজন দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মানববন্ধনে আসতে বাধা দিয়েছেন হিন্দুদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাসিরনগর উপজেলার বাহির থেকেও অনেক মানুষ অংশ নেন কর্মসূচিতে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে ওই আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর সমর্থকরাও অংশ নেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ছায়েদুল হক নাসিরনগর ডাকবাংলোতে বৈঠক করে কিছু হিন্দু নেতাকে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে উপস্থিত হিন্দুনেতা ও উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন রায়, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ চন্দ্র রায়, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত, ইউপি সদস্য নগেন দাসকে দেখা যায়নি মানববন্ধনে বা এর আশপাশে।

মানববন্ধন চলাকালে মন্ত্রীর সমর্থক ও নাসিরনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেমসহ আরও কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা যায়, কর্মসূচি পালনস্থলের বিপরীতে অবস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভবনের দোতলায় পায়চারী করতে। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করেন- ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক ও মাহমুদুল হাসান।

আনিসুর রহমান হামলা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার, বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। মানববন্ধনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাসিরনগর উপজেলা শাখার সভাপতি আদেশ চন্দ্র দাস বলেন, হিন্দুদের উপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একে কেন্দ্র করে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ তার।

ফুঁপিয়ে কেঁদে তিনি আরও বলেন, এই নাসিরনগর ধর্মীয় সম্প্রীতির জায়গা। কিন্তু এখানে এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত যেন দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা হয়। একই সঙ্গে কেউ যেন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকে যেন সরকার জোরালো নজরদারি করে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, আমরা সত্যের পক্ষে। আমরা নির্যাতিতদের পক্ষে। আমাদের মানববন্ধন করতে বাধাদানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আটকে রাখতে পারেনি। আমাদের সঙ্গে জনগণ রয়েছে।

নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দলের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাদল বলেন, আপনারা (হিন্দুদের অন্য গ্রুপ) কেন আমাদের সঙ্গে আসেন না। আমরা তো সবাই এক। দূরে না থেকে আমাদের সঙ্গে কাঁধ মেলান, প্রতিবাদ করুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কাজী মাসুদও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজিত চক্রবর্তী এই প্রতিবেদককে বলেন, হিন্দুদের মধ্যে যারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেননি, তারা মন্ত্রীর দালাল। তারা ভুলে গেছেন, নির্যাতনের কথা। আমরা সত্যের পক্ষে লড়ে যাব। তিনি বলেন, নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্তদের উপকার করা।

প্রসঙ্গত, হিন্দুদের প্রতি মন্ত্রী ছায়েদুল হকের করা বিতর্কিত মন্তব্যে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন পালন করা হয়। গত বুধবার এ উপজেলায় এসে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button