অন্যরকমপাঁচমিশালি

হীরার খনির গরিব দেশ

নিউজ ডেস্ক: হীরা বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠছে চকচকে এক পাথরের কথা। যেটি কিনা বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান এক টুকরো পাথর। সাদার পাশাপাশি কালো, সবুজ, নীল, গোলাপি, বেগুনি, হলুদ ও লালসহ অনেক রঙের হীরা পাওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে এই খনিজ সম্পদটি। তবে সেসব দেশকে এই মূল্যবান সম্পদটি কতটা উন্নত করতে পেরেছে, খোঁজ নিয়েছে কি কেউ?

তেমনই এক হীরার খনির মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওন। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি রয়েছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। এখানকার মানুষ আজো থাকেন অর্ধাহারে। যেখানে শিক্ষা বিলাসিতা মাত্র। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ খুবই অভাবী এবং অসুখীও। এখানকার মানুষ খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পণ্য টাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পণ্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইল এর পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ। তারপরও এদেশের মানুষের এই করুণদশা কেন? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই।

এর প্রধান কারণ হচ্ছে শুধু মাত্র শ্রমিক হিসেবেই এখানকার মানুষেরা কাজ করেন খনিগুলোতে। বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো সেখানে খনি খননের কাজ করে থাকে। যে কারণে এই সম্পদের বেশিরভাগ মূল্যই চলে যায় মালিকদের হাতে। মান মাত্র মজুরিতে এখানে কাজ করতে হয় স্থানীয় মানুষগুলোকে। এছাড়াও সিয়েরা লিওনের মানুষের এই দুর্দশার আরো একটি কারণ রয়েছে।

সিয়েরা লিওনে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবর। সিয়েরা লিওনকে ‘হীরার খনির গরিব দেশ’ বলা হলেও এদেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দীর্ঘদিন ব্রিটিশ উপনিবেশও ছিল এখানে। ব্রিটিশদের অত্যাচারে সিয়েরা লিওনের জনগণের জীবন ছিল দুর্বিষহ। অবশেষে ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল সিয়েরা লিওন ব্রিটিশ শাসন থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি লাভ করে এবং স্বাধীন দেশগুলোর তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৬৪ সালে দেশটিতে দুর্নীতি ও অপশাসনের দরুন অরাজকতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ এবং অসন্তোষ। অভ্যন্তরীণ কলহ দিন দিন বাড়তেই থাকে। পরিণতিতে স্বাধীনতার ত্রিশ বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিয়েরা লিওনে। ১৯৯১ সালের ২৩ মার্চ কয়েকটি বিদ্রোহী দল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জোসেফ মোমাহকে পরাস্ত করার চেষ্টা করলে এ যুদ্ধের আরম্ভ ঘটে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে রক্তাক্ত ও ভয়াবহ গৃহযুদ্ধগুলোর একটি, যা ২০০২ সাল পর্যন্ত চলে এবং এ যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। আর দেশটির তৎকালীন ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ নিজেদের বাসস্থান হারায়।

সিয়েরা লিওনের সাংবিধানিক নাম সিয়েরা লিওন প্রজাতন্ত্র। ভূ-রাজনৈতিকভাবে সিয়েরা লিওনের উত্তর সীমান্তে গিনি, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। সিয়েরা লিওনের বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল থেকে রেইনফরেস্ট পর্যন্ত একটি বিচিত্র পরিবেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় পানিবায়ু বিদ্যমান। সিয়েরা লিওনের মোট আয়তন ৭১,৭৪০ বর্গকিলোমিটার (২৭,৬৯৯ বর্গমাইল) এবং এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ মিলিয়ন।

Back to top button